ক্যালিফোর্নিয়া সংস্কৃতি ও বিনোদন

রহস্যময় হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া

glenধরা যাক, দুই পাশে মরুময় একটি অন্ধকার হাইওয়ে ধরে যাচ্ছেন। চুলে পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে শীতল হাওয়া। বহু দূরে একটা হোটেলের আবছা আলোর দেখা পেলেন। মাথা গোঁজার জন্য সেই হোটেলে থামতে হবে আপনাকে। হোটেলে ঢোকার পথে বাতি ধরে আপনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে এক রহস্যমানবী। সেই পথ স্বর্গেরও হতে পারে, হতে পারে নরকেরও। ইগলস ব্যান্ডের বিখ্যাত ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ গানে এ রকম এক রহস্যময় হোটেলের ইঙ্গিত আছে। ১৯৭৭ সালে হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া অ্যালবামটি প্রকাশের পর থেকেই রহস্য ছড়িয়েছে এই গান।
প্রকাশের পর থেকেই নানাভাবে এর ব্যাখ্যা করতে শুরু করে মানুষ। চার্চের লোকেরা খেপে গিয়ে বলেন, গানটিতে নাকি শয়তানের উপাসনার ইঙ্গিত আছে। এমনকি ছোটদের জন্য গানটি ছিল নিষিদ্ধ। বিতর্কের তকমা লাগতে যেমন দেরি হয়নি, তেমনি রাতারাতি আলোচিত হতেও সময় লাগেনি ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’র। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গানের মর্মবাণী কিন্তু আজও ফাঁস করেননি ইগলসের সদস্যরা। শুধু এটুকুই জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ক্ষয়িষ্ণু সংগীতশিল্পের কথা আছে গানটায়। দলটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ডন হেনলি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমাদের চিরচেনা আমেরিকার দুর্বলতাগুলো নিয়েই এই গান।’
গানের খ্যাতির সুফল পেতে হোটেল মেক্সিকো, টুডোস স্যান্টোসের মালিকেরা বলতে শুরু করল, তাঁদের হোটেলঘরে বসেই তো গানটি লেখা হয়েছে। আসলে গানটি প্রকাশের আগে ইগলস ব্যান্ডের কেউ কখনোই কোনো হোটেলে থাকেননি। যদিও গুজবও কিংবদন্তি হয়ে যায়। এও শোনা যেত, লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছেই ক্যামারিলো স্টেট মানসিক হাসপাতালকেই নাকি হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া বলত একদল লোক। কিন্তু এর সত্যতা মেলেনি আজও। এমনকি গানের কথা থেকে এমন গুজবও রটেছিল যে ওই হোটেলে একবার ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না।
‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ গানে গিটারের সুরের জাদু আজও বিমোহিত করে রাখে তরুণদের। সত্তরের দশকে রক আইকন হয়ে যাওয়া এই ব্যান্ডের অন্যতম গিটারিস্ট গ্লেন ফ্রেই। সম্প্রতি চলে গেলেন তিনি। গানটির মূল গল্প ও ভাবনা ইগলস ব্যান্ডের এই সহপ্রতিষ্ঠাতার। গানটি লিখতে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন ব্যান্ডের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা বন্ধু ডন হেনলি। গীতিকার, গায়ক, নির্মাতা, অভিনেতা গ্লেন ও তাঁর দল ইগলস রক অ্যান্ড রোল ও জ্যাজ সংগীতের সমন্বয়ে রক ধাঁচের গানে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিল। শুধু ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ই নয়, ‘টেক ইট ইজি’, ‘টাকিলা সানরাইজ’, ‘ডেসপারাডো’সহ আরও অনেক গান লিখেছেন গ্লেন। আশির দশকে একবার ভেঙে যায় ইগলস দলটি। ১৯৯৪ সালে আবারও পুনর্গঠিত হয়। অসুস্থ হয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত দলের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কনসার্টে অংশ নিতেন গ্লেন। ছয়টি গ্র্যামিসহ বহু পুরস্কার রয়েছে এই গিটারিস্ট ও তাঁর দলের।
এত মিথের সেই অ্যালবাম সে সময়ের সেরা অ্যালবাম, বিশ্বজুড়ে বিক্রি হয়েছিল প্রায় ১৫ কোটি কপি। আর এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সব থেকে জনপ্রিয় গানগুলোর তালিকায় আছে ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’।
, ওয়েবসাইট অবলম্বনে