যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মেম্ফিসে বাংলাদেশ নাইট মানেই এখানে বসবাসরত বাংলাদেশি, ভারতীয় ও নেপালিসহ অন্যান্য এশিয়ানদের জন্য রীতিমতো বিরাট এক আয়োজন। প্রতি বছর ইউনিভার্সিটি অব মেম্ফিসের স্টুডেন্টস ইভেন্ট ও বাংলাদেশিদের অর্থায়নে এই বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজক মেম্ফিসের বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞ ছিল দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নাচ, গান, অভিনয় ও ফ্যাশন শো। দ্বিতীয় ভাগে খাওয়া দাওয়ার পরপরই মেগা কনসার্ট। এ বারের আকর্ষণ ছিলেন বাংলাদেশের আলোচিত সংগীত শিল্পী রাজীব রহমান। এই আয়োজনে লোকসমাগম ছিল প্রায় পাঁচ শ জনের বেশি। এত লোকজনের সামনে নিজের দেশকে উপস্থাপনা করতে পেরে অংশগ্রহণকারী সবাই নিজেকে গর্বিত বাঙালি মনে করছিলেন।
এ কথা বলেছেন বিএসএর বর্তমান সভাপতি মাহবুবুল হাসানও। ২০১৬-১৭ কমিটিতে আরও রয়েছেন শরিফ মেহেদি, সালেহা খাতুন ও সৈকত দাস। তারা সবাই এখানকার গ্র্যাজুয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী।
ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশ নাও চিনে, এই গানের দলগত নাচ দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরু হয়। এরপর দলীয় সংগীত, নাচ গান, দর্শকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান ও ফ্যাশন শোর মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠানের প্রথম অংশ। ছেলেদের দলীয় নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন মৃদুল, শুভ, আনিক ও অঙ্কন। বাংলাদেশের মেয়ে গানের তালে ছিল ছেলেদের নাচ।
খাবার ছিল মাটন বিরিয়ানি, চিকেন তন্দুরি, ফিরনি ও দুই ধরনের মিষ্টি। বিরিয়ানির গন্ধে বল রুমে মনে হচ্ছিল যেন ঢাকার কোনো বিয়ে বাড়ির আয়োজন।
আমেরিকানদের যারা আগে কখনো বাংলাদেশ নাম শোনেননি তাদের সামনে এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ, সংস্কৃতি ও খাবার নিয়ে আগ্রহ তৈরি করা বা দেশকে পরিচয় করে দেওয়া হয়। দেশ ছোট হতে পারে কিন্তু অতিথি আপ্যায়নে বাংলাদেশ সেরা। দেশের স্বনামধন্য আর কারও নাম না জানলেও এখানকার অনেকে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চেনে। কারণ এই শহরের অদূরে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল মেম্ফিস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ইভেন্ট সার্ভিস। মেম্ফিসের বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশার মানুষসহ আরও কয়েকজন বিভিন্নভাবে এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাসহ ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইসর ড. হাসান আলীও বাংলাদেশ নাইটকে সফল করতে নানা সহযোগিতা করেন।
বাংলাদেশ নাইট দেখার পর স্থানীয়সহ অন্যান্যরা বাংলাদেশ আর দেশের মানুষের প্রশংসা করেন। অন্যদিকে অংশগ্রহণকারীরা ২৩ সেপ্টেম্বর আবার কবে আসবে সেটাই যেন ভাবছিল সবাই। মিসিসিপি নদের পারে মেম্ফিসে এক টুকরা বাংলাদেশ নাইটের গল্প এইখানেই থামবে না। সামনে আসছে স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল। এ যেন একদল তরুণ বাংলাদেশিদের দেশকে আমেরিকানদের সামনে তুলে ধরার একটা ছোট গল্প। শেষ হয়েও যার শেষ হয় না।