ইতিহাস-ঐতিহ্য

আমেরিকায় কোরবানির একাল-সেকাল

qurbani1প্রবাসের ঈদ আপনজন ছাড়া অনেকের কাছে কিছুটা কিছুটা মন খারাপ করা ঈদ। তবে আমেরিকাপ্রবাসী সিংহ ভাগ বাংলাদেশিদের কাছে তা এখন অনেকটা আনন্দের। কারণ এখানে বেশির ভাগ প্রবাসী পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন। আমেরিকায় বাংলাদেশি প্রবাসীদের আগমন আশির দশক থেকে। তবে ৮২ সাল থেকে ৯১ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় আসেন। আবার ৯১ সাল থেকে ওপি ১ ও ডিভি ভিসার মাধ্যমেও অনেকে আমেরিকায় আসেন।

প্রথম দিকে বেশির ভাগ প্রবাসী ছিলেন ব্যাচেলর। তাই কোরবানি দেওয়ার চিন্তা কেউ করতেন না। তারা দেশে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। এ ছাড়া এখানে কোরবানি দেওয়াটাও সহজ ছিল না। তেমন গ্রোসারি ও ফার্ম ছিল না ধারে কাছে। তাই প্রবাসীরা কোরবানি দেওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারতেন না। সময়ের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বাংলাদেশিরা শুরু করেন গ্রোসারি ব্যবসা। তারা গ্রোসারি শুরু করার পর কোরবানি সহজলভ্য ও নাগালের মধ্যে চলে আসে। সময় যায় ব্যাচেলর প্রবাসীরা বিয়েশাদি করে সংসার সাজান। বাংলাদেশি বধূরা আমেরিকায় সংসার শুরু করেন। বিয়ের পর কোরবানির গুরুত্ব আরও বেশি করে অনুধাবন করেন প্রবাসীরা।
বিশ্বের যে কোনো জায়গার চেয়ে সবচেয়ে ভালো ইমিগ্রেশন সুবিধা আমেরিকায় বিদ্যমান। আমেরিকায় একজন গ্রিনকার্ডধারী পাঁচ বছর পর সিটিজেন হওয়ার সুযোগ পান। তিনি পরিবারের জন্য আবেদন করে স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা এবং পরবর্তীতে ভাইবোনদেরও আমেরিকায় নিয়ে আসার সুযোগ পান। এই সুযোগ যারা পেয়েছেন তারা আমেরিকায় ঈদ করেন দেশীয় আমেজে। ফলে রমজানের ঈদের মতো কোরবানি ঈদটা হয়ে উঠে বেশ উপভোগ্য। বেশির ভাগ বাংলাদেশি তাদের আপনজনদের নিয়ে এক জায়গায় থাকেন। নিউইয়র্ক, মিশিগান, নিউজার্সি, টেক্সাস, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রবাসীরা বসবাস করেন ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে।
qurbani2আমেরিকায় কোরবানির মাংস কাটাকাটির দৃশ্য। ফাইল ছবিঅথচ ১৫ আগে আগেও ঈদ এখনকার মতো এতটা রঙিন ছিল না। সময়ের ধারাবাহিকতায় আজ আমেরিকার ঈদগুলো বর্ণিল। কোরবানির ঈদ হচ্ছে আমেরিকায় বেশ কালারফুল। প্রবাসীরা যারা জীবনে দেশে কখনো কোরবানি দিয়ে মাংস কাটেননি তারা প্রবাসে নিজ হাতে মাংস কাটেন। এ ছাড়া সব জায়গায় হালাল মাংসের জন্য অনেক ফার্ম তৈরি হয়েছে। নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, ডালাস, মিশিগান, বোস্টন, ওয়াশিংটন, মায়ামি ইত্যাদি প্রধান প্রধান রাজ্য বা শহর ছাড়াও অন্যান্য শহরে প্রবাসীরা নিজের ইচ্ছা মতো কোরবানি দেওয়ার সুযোগ পান ফার্মে গিয়ে। ঈদের নামাজের পর তারা ফার্মে যান। সেখান থেকে বিকেলবেলা কোরবানির মাংস নিয়ে ঘরে ফেরেন। ফার্ম কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করে রাখে। সিরিয়াল অনুযায়ী গরু ও খাসি কোরবানি হয়। প্রবাসীরা নিজেরাই তা কেটে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
বর্তমানে মিশিগানে ১২ থেকে ১৫ মাইলের মধ্যে রয়েছে ৪৫টি বাংলাদেশি গ্রোসারি। প্রতিটি গ্রোসারি কোরবানির অর্ডার নিচ্ছে। নিউইয়র্কেও শ খানেক গ্রোসারিতে কোরবানির অর্ডার রাখছে।
এখানে গরুর দাম পড়ে ১২০০ থেকে ১৮০০ ডলার। খাসি ৩০০ থেকে ৪৫০ ডলার, ল্যাম্ব ৩৫০ ডলার।