ইতিহাস-ঐতিহ্য

মোমের আলোয় জ্বলে উঠবে আমেরিকা!

আর মাত্র কয়েক দিন। হ্যালোইনের মোমের আলোয় জ্বলে উঠবে আমেরিকা। আগামী ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় আমেরিকার বাসা–বাড়ি মোমের আলোয় জ্বলে উঠবে। বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শিশু-কিশোরেরা একে-অপরের ঘরের দরজায় ট্রিক অর ট্রিট বলে কড়া নাড়বে।

প্রতি বছরের মতো এবারও হ্যালোইনকে ঘিরে রঙের উৎ​সবে মেতে উঠবে আমেরিকার ছোট-বড় শহর। ইতিমধ্যে বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে গির্জা, বড় বড় স্টোরগুলোর সামনে শত শত হলদে কুমড়া, হ্যালোইন কস্টিউমসহ নানা রঙের পণ্যসামগ্রী দিয়ে থরে থরে সাজানো হয়েছে। হরদম বেচাকেনাও চলছে। মাধ্যমিক স্কুলগুলোর ফল কনসার্টে হ্যালোইনকে স্বাগত জানিয়ে দ্য ডার্ক নাইট গান পরিবেশন করা হচ্ছে।
ঐতিহ্যের এ উৎ​সব হ্যালোইন শুরু হয়েছিল আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে। এসব দেশে এই উৎসব ছিল নবান্নের উৎসব। যুক্তরাষ্ট্রে এ উৎ​সবের ধারা বদলে গেছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করেন, এ দিনে সব মৃত আত্মারা পৃথিবীর বুকে নেমে আসেন নিকটজনের সান্নিধ্য লাভের আশায়। তাই এ দিনকে অনেকে স্পিরিট অথবা গুড সোল বলে থাকেন।
pumpkin4আইরিশ ও স্কটিশ লোকসাহিত্যে হ্যালোইনকে বলা হয়েছে সুপার ন্যাচারাল এনকাউন্টার্স। ওই সময় মানুষের বিশ্বাস ছিল, শীতের শুরুতে হ্যালোইন সন্ধ্যায় সব মৃত আত্মীয়-স্বজনের আত্মা নেমে আসে পৃথিবীর বুকে। তাই হ্যালোইন প্রতীক হিসেবে সেদিন the jack O-Lanterm (এটা হলো কুমড়ার মধ্যে একটা মোমবাতি জ্বালানো ও কুমড়াকে মানুষের মুখায়ব আকৃতি দেওয়া) জ্বালানো হয়। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, মানুষের আত্মা স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি অবস্থানে আছে।
তাই এদিন সবাই নিজ-নিজ বাসা–বাড়ির সামনে লণ্ঠন ও রঙিন বাতি জ্বালিয়ে রাখেন। যেন মৃত আত্মারা পথ দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। অনেকে বাড়ির সামনে আঙিনা সাজাতে ভালোবাসে। কেউ কেউ মাকড়সার জাল বিছিয়ে কঙ্কাল টাঙ্গিয়ে ভুতুড়ে একটা পরিবেশ তৈরি করে রাখেন। বড় বড় মিষ্টি কুমড়ো হ্যালোইনের সময় প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ির সামনে রাখা হয়। কুমড়োর ভেতরটা ভালো করে পরিষ্কার করে তার আবার মুখ-চোখ বানানো হয়। তারপর ভেতরে ভরে দেওয়া হয় বাতি।
এ ​দিন বাসা–বাড়িতে টিমটিম করে বাতি জ্বলতে থাকে আর ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার করে চকলেট নিয়ে অপেক্ষা করা হয় ছেলেমেয়েদের জন্য। ঘরে ঘরে বাচ্চারা নানা ডিজাইনের ভৌতিক কস্টিউম পরে বাইরে বের হবে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরজায় নক করবে। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ট্রিক অর ট্রিট বলে চকলেট-কান্ডি আদায় করে নেবে। এভাবে সারা সন্ধ্যা ছেলেমেয়েরা বাড়ি বাড়ি যায়। সংগ্রহ করে আনে ব্যাগভর্তি কান্ডি। প্রতি বছরের মতো এবারও ৩১ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি চলবে হ্যালোইন উৎ​সব।