ভার্জিনিয়া

ভার্জিনিয়ায় যাত্রাপালা মধুমালা ও মদন কুমারের মহরত

virg
বাংলা রূপকথার ঐতিহাসিক যাত্রাপালা মধুমালা ও মদন কুমারের শুভ মহরত ওয়াশিংটনের অদূরে ভার্জিনিয়ার আনানডেল শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০ নভেম্বর রোববার শহরের ম্যাশন ডিস্ট্রিক্ট গভর্নমেন্ট সেন্টারে সন্ধ্যায় সুরবিতানের আয়োজনে এই মহরত অনুষ্ঠিত হয়।

নতুন প্রজন্মের শিশুদের নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় আর হারিয়ে যাওয়া বাংলার লোকজ শিল্প ও সাহিত্য প্রবাসের তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ওয়াশিংটনের সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরবিতান দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এই সংগঠনের পরিচালক সংগীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম। সুরবিতানের আয়োজনে এবং তাঁর সার্বিক পরিচালনা ও নির্দেশনায় ২০১৭ সালের ২২ জুলাই শনিবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে যাত্রাপালা মধুমালা ও মদন কুমারের মঞ্চায়ন। এ উপলক্ষে শুভ মহরত অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়।
মহরত অনুষ্ঠানে বুলবুল ইসলাম বলেন, এক সময় বাংলাদেশ যাত্রাপালা অনেক জনপ্রিয় ছিল। রচিত হয়েছিল নানা রূপকল্প। রাতের পর রাত জেগে থেকে মানুষ বিভিন্ন যাত্রার পালা দেখেছেন। আলিবাবা, রূপবান, বেদের মেয়ে জোছনা, সোহরাব-রোস্তম, সিঁদুর নিয়ো না মুছে, গরিবের মেয়ে, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা—এ রকম বহু যাত্রাপালা দেখার জন্য যাত্রাপাগল মানুষ ছুটে যেতেন যাত্রা দেখতে। কিন্তু আজ যাত্রা অবস্থাটা কি? যাত্রাপালা নিয়ে মানুষের মধ্যে আগের মতো কৌতূহল এখন তেমন একটা নেই। গ্রামগঞ্জে যাত্রা প্রদর্শিত হওয়ার কথা আজকাল খুব একটা শোনাও যায় না। দিন যতই যাচ্ছে মনে হয় যাত্রাপালা লুপ্ত হতে চলেছে। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের যাত্রা নিয়ে তেমন একটা কৌতূহলও দেখি না। যুগ পাল্টে যাওয়ার কারণেই হয়তো যাত্রার আজ করুণ পরিণতি।
বুলবুল ইসলাম বলেন, যাত্রার কথা খুব করে মনে পড়ে। সে অনেক বছর আগের কথা। চারদিক খোলা, বাঁশের বা কাঠের খুঁটিতে টাঙানো মাথার ওপরে শামিয়ানা। তার নিচে পাতা মঞ্চে যাত্রাশিল্পী অভিনয় করতেন। সাধারণ আঙিনার চেয়ে অভিনয়স্থল মাটি দিয়ে হাতখানেক উঁচু করা হতো। কখনো বা চৌকি পেতে মঞ্চ বানানো হতো। মাইকের ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রা শিল্পীরা তখন সাধ্যমতো উঁচু সুরে গান গাইতেন ও কথা বলতেন। খালি গলায় তারা তাদের গান বা কথা শত শত দর্শকের কানে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন। অভিনয়স্থলের চারদিকে মাটিতে শতরঞ্জি কিংবা শুকনো খড় বিছিয়ে দেওয়া হতো, সেখানে বসে দর্শক যাত্রা উপভোগ করতেন। অভিজাত শ্রেণির লোকদের জন্য চেয়ার পেতে দেওয়া হতো। যাত্রায় তিরিশ-চল্লিশ বছর আগে পুরুষদেরই নারী চরিত্রে অভিনয় করতে হতো। সখীদের নাচ জমে উঠলে এবং দর্শকদের মনঃপূত হলে হর্ষধ্বনিতে যাত্রার আসর মুখরিত হয়ে উঠত।
বুলবুল ইসলাম আরও বলেন, ওয়াশিংটনে সুরবিতান হারিয়ে বাংলার চিরন্তন রূপকল্পগুলো নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এখানে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মেধাকে কাজে লাগিয়ে সুরবিতান ইতিমধ্যে রূপবান, বেহুলা সুন্দরী ও সাত ভাই চম্পার মঞ্চায়ন করে প্রবাসী দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবারও নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে শুরু হলো মধুমালা ও মদন কুমারের যাত্রা। আশা করি এবারও আমরা দর্শকদের মন জয় করতে পারব। বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সুরবিতানের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে তিনি সুরবিতানের প্রযোজক ফটো সাংবাদিক কামরুল ইসলাম এবং মধুমালা ও মদন কুমার যাত্রাপালার মূল দুই শিল্পী মরিয়ম ও অপূর্বকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর অন্যান্য শিল্পীদেরও একে একে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
মধুমালা ও মদন কুমার যাত্রাপালার শুভ উদ্বোধন করেন পারভিন পাটোয়ারি, রুখসানা পারভিন ও মোহাম্মদ আলমগীর। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মাজহারুল হক, শামীম চৌধুরীসহ আরও অনেকে। এরপর অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কবি ও শিল্পী ফাহমিদা হোসাইন, আবু রুমি, নাসির আহমেদ, মজনু মিয়া, সুমি চৌধুরী, শিখা ও মৃদুল। যন্ত্র সহযোগিতায় ছিলেন ফজলুর রহমান, আশিস বড়ুয়া ও রোমান।
অনুষ্ঠানে মধুমালা ও মদন কুমারের স্পনসর ও শুভানুধ্যায়ীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। রাতের খাবার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।