প্রবাসের রাজনীতি

নানার হত্যাকারীকে ফিরিয়ে দাও, যুক্তরাষ্ট্রকে জয়

wazedবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড পাওয়া রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমসে জয় নিবন্ধে এই দাবি জানান।
জয় তাঁর লেখায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যার বিয়োগান্ত ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে তাঁর দণ্ড হয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরী কোনো সাজা ভোগ করেননি। বাংলাদেশ ২০০০ সালে তাঁকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করে। এখন দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ তাকে ফেরত পেতে অপেক্ষা করছে। জয় বলেন, ‘আমার নানাকে যখন হত্যা করা হয় তখন আমার বয়স চার বছর। তাঁর মৃত্যু আমার বা আমার পরিবারের শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিই হয়নি। পুরো জাতি এ হত্যায় শোকগ্রস্ত। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি এবং দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ওই বছরই আমার জন্ম হয়।’
পাকিস্তানের একনায়কতন্ত্র পাশবিক শাসনের বিপরীতে একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন করেন বঙ্গবন্ধু। সেনা অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক সরকার তাঁর খুনিদের রক্ষা করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম সুবিধাভোগী মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এসব খুনিদের রক্ষায় আইন করেন। এসব খুনি শুধু রক্ষাই পায়নি তাদের নানা গুরুত্বপূর্ণ চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।
১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হয়। এরপর এক প্রক্রিয়ার পর অবশেষে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত ঐতিহাসিক রায় দেন। এ মামলায় পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয়।

জয় বলেন, ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হওয়ার আগে অন্য ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে যোগ দেন রাশেদ চৌধুরী। তিনি সানফ্রান্সিসকোতে আশ্রয় চান। তবে তাঁর বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত নয়। এরপর থেকে তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস এবং শিকাগোতে ছিলেন বলে জানা যায়। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ফিরিয়ে নিতে নানা চেষ্টা চালালেও রাশেদ চৌধুরী এখনো পালিয়ে আছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে তাঁকে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
জয় বলেন, রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে তাঁর ফাঁসির দণ্ড হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেও রাষ্ট্রদ্রোহ, সন্ত্রাস এবং হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী একাই নন যিনি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এর ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদকেও ২০০৭ সালে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তাঁকে ফেরত পাঠানোর পর অন্য চার খুনির সঙ্গে ২০১০ সালে মহিউদ্দিনের ফাঁসি হয়।
জয় বলেন, ‘আমার জানা মতে, রাশেদ চৌধুরীকে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হয়নি। তাই তাঁকে ফেরত পাঠাতে বাধা নেই। রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে আর দেরি করার কোনো কারণ নেই। তাঁকে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের বাংলাদেশের বারবার করা আবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া দেওয়া উচিত। যার ফলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।