আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্ক

ট্রাম্পের জয়ে বিশেষ প্রভাব পড়বে না বাংলাদেশে

donald-trump
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা, উন্নয়ন, সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা ও পেশাদারি সে ক্ষেত্রে মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। তবে ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হলে তা বাংলাদেশের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চমকপ্রদ জয়ের পর এমন প্রতিক্রিয়া জানালেন কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদেরা।

দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। বিভিন্ন ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে সম্পর্কের উন্নয়নও ঘটবে।
ট্রাম্পের জয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের বিজয়ে নিরাপত্তা, উন্নয়ন, সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমস্যায় পড়তে পারে। তিনি বলেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প কড়াকড়ি আরোপ করতে পারেন বলে নির্বাচনী প্রচারের সময় জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের জন্য এটা ভয়ের কারণ। অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সেখানে অনেক বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আমরা এখনো নিরাশ না হয়ে আশা ধরে রাখতে পারি। দেশটিতে নিম্নস্তরের কাজ কে করবে, সেই চিন্তা থেকে ট্রাম্প হয়তো তাঁর এ ঘোষণা বাস্তবায়ন না-ও করতে পারেন। এটা বাস্তবায়নযোগ্য হবে কি না, সেটাও দেখতে হবে।’
তিনি বলেন, এই নির্বাচনে একটি বিষয় প্রমাণিত হলো যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামো ও নেতাদের প্রতি আস্থা কমছে। তাঁরা হিলারি ক্লিনটনের মতো অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী নেতাকে গ্রহণ করেননি। ট্রাম্পের মতো একজন নতুন ব্যক্তিকে বেছে নিয়েছেন। অথচ রাজনীতিতে তাঁর কোনো অভিজ্ঞতা নেই। মার্কিনরা ভাবছেন, তাঁদের অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত যেসব সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে নতুন লোক দরকার।
মুক্তবাজার নীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের রক্ষণশীল হওয়ার ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হুমায়ুন কবীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ ছয় বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। সেখানে রপ্তানি করে এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এটা খুবই সামান্য। ট্রাম্পের এই নীতি বাস্তবায়ন হলে চীনের মতো বড় দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এ ধরনের নীতি কার্যকর হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও ভালো হবে না। এর আগেও রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরা রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করার পর দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল।
একই রকম মন্তব্য করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির যে ধারাবাহিকতা ও পেশাদারি রয়েছে, তাতে ট্রাম্পের জয়ের কারণে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসার সুযোগ কম। ট্রাম্প রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তিনি রক্ষণশীল বক্তব্য দিয়ে মার্কিন জনগণের মন জয় করে নির্বাচিত হয়েছেন। এখন বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব পড়বে কি না তা নির্ভর করছে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারের সময় মুক্তবাজার ও অভিবাসন বিষয়ে যা ঘোষণা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের ওপর। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে, মুক্তবাজার বাণিজ্য একটি বড় বিষয়। বাংলাদেশ এই সুবিধা নিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়ে চলছে। সে ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী মুক্তবাজার বাণিজ্যে রক্ষণশীল হলে বাংলাদেশ অবশ্যই সমস্যায় পড়বে।
তিনি বলেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ জমির বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব সময় জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। রাতারাতি কোনো কিছু পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের একক ক্ষমতা নেই। সেখানে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটেরও ক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং, এখনই কোনো পরিবর্তন হবে, এটা ভাবার কারণ নেই।
বিএনপি হিলারিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চেয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন আলোচনাকে উড়িয়ে দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এসব একদম মনগড়া কথা। বিএনপি এ ধরনের কিছু কখনো ভাবেনি। এ ধরনের মন্তব্য করে নিজের দেশকে ছোট করে ফেলা হয়। বিএনপির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আগের মতোই ভালো থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফলের কোনো প্রভাবই পড়বে না বাংলাদেশে। বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কোনো দলের ওপর রাজনৈতিক কোনো প্রভাবও ফেলবে না এই নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো বৈশ্বিক সম্পর্ক, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নীতি অনুসরণ করে চলে। তাই ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না, সম্পর্ক একই থাকবে।
তিনি বলেন, ‘অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্য ও ঘোষণা নির্বাচনী কৌশল হতে পারে। এত বিপুলসংখ্যক অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বাস্তবসম্মত নয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়, সেটা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’