আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্ক ব্যবসা-বাণিজ্য

নিউইয়র্কে ভাষণ : জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার

ছবি : ফোকাস বাংলা

বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের সম্প্রসারণ ও একটি আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) দিতে দেশটির সরকারের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত সোমবার নিউইয়র্কের হোটেল ওয়ালডর্ফ অ্যাসটোরিয়ায় ‘বিজনেস কাউন্সিল অব ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের (বিসিআইইউ)’ উদ্যোগে আয়োজিত এক মধ্যাহ্ন ভোজসভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে বক্তব্যে এ আহ্বানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো ৫২টি দেশ ও জোট বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজারসুবিধা দেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রও এদের মতো এই সুযোগ দিতে পারে।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো শীর্ষে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গত বছর দাঁড়িয়েছে সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উচ্চশুল্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ব্যাপারে শর্তারোপের ইস্যুগুলো যদি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, তাহলে এই বাণিজ্য আরও বাড়বে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য জিএসপি-সুবিধা স্থগিত করে। এমনকি ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশের জন্য জিএসপি-সুবিধা পুনর্বহালও করে দেশটি।
ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি পারস্পরিক মুনাফা ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অংশীদার হতে এবং এগিয়ে আসতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। এ ধরনের লাভজনক অংশীদারত্ব দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও জোরদার করবে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে উদার বিনিয়োগনীতি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বিশেষত নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ, অটোমোবাইল ও হালকা প্রকৌশল, রাসায়নিক সার, কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিকস ও প্লাস্টিক পণ্য, আইসিটি, নৌসম্পদ অন্বেষণ, পর্যটন, মেডিকেল যন্ত্রাংশ, টেলিযোগাযোগ ও জ্ঞানভিত্তিক উচ্চপ্রযুক্তির শিল্প খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে আরও বেশি নারীদের নিয়োগ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া ওয়াশিংটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এখন চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর এর প্রমাণ। ক্রমবর্ধমান এ সম্পর্ক দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে প্রভাব রাখছে।
ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের দূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ভোজসভায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিশা দেশাই বিসওয়াল ছাড়াও আমেরিকান টাওয়ার করপোরেশন, ওয়ালমার্ট, মেটলাইফ, বোয়িং, শেভরন, জিই, কোকাকোলাসহ বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।

‘সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক অব পাবলিক অর্গানাইজেশন’ গঠনের প্রস্তাব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক অব পাবলিক অর্গানাইজেশন’ গড়ে তোলার বিষয়ে দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমঝোতা এবং গণ-উদ্ভাবনী খাতের বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, এটি চিন্তাভাবনার সম্প্রসারণ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরের থেকে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘের সাউথ সাউথ কো-অপারেশন অফিস আয়োজিত ‘সাউথ সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশন ইন স্কেলিং আপ ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি’ শীর্ষক সেমিনারে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমরা উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে ব্যর্থ হলে সবার জন্য সমতাসূচক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সুদূর পরাহতই থেকে যাবে।’
এর আগে গতকাল সকালে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জং ইয়ং কিম প্রধানমন্ত্রীর হোটেল স্যুইটে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

কমনওয়েলথের কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব কামনা

সোমবার জাতিসংঘের সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কমনওয়েলথের মহাসচিব ব্যারোনেস প্যাট্রিসিয়া জ্যানেট স্কটল্যান্ড। এ সময় নারীর ক্ষমতায়নে কমনওয়েলথের নতুন কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন ও নেতৃত্ব কামনা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথের মহাসচিবকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। প্যাট্রিসিয়া সানন্দে এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা সফর করবেন বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার: আজ বুধবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন। এ ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ বেতার।