যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তরুণী সেগুফতা আনজুম হুমা রোডস স্কলারশিপ (Rhodes Scholar) ২০১৭ অর্জন করেছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সম্মানজনক প্রাচীন শিক্ষাবৃত্তি। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ৩২ জন বৃত্তিপ্রাপ্তের মধ্যে বাংলাদেশি হুমা একজন। এ গৌরবময় বৃত্তি নিয়ে “ হুমা ”পৃথিবীখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য মনোনীত হয়েছেন। দি ওয়াশিংটন পোস্ট, দি নিউইয়র্ক টাইমস, দি উচিটা ঈগল, দি বেল ইয়ার ব্রিজ সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এ খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। গত ২২ নভেম্বর এ ফল প্রকাশ করা হয়েছিল। তিনি Refugees & forced migration – বিষয় নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন। ভবিষ্যতে তিনি জাতিসংঘের ত্রাণ-উদ্বাস্তু সংস্থায় কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
নন-বৃটিশ স্টুডেন্টদের জন্য এটি পোস্ট-গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ (রোডস্ স্কলারশিপ) । ১৯০২ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী চেচিল জন রোডস (Cecil john Rhodes)- এর নামে এটি চালু করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে আমেরিকার ৫০ রাজ্যের ৩১১ কলেজ থেকে ২৫০০ ছাত্র-ছাত্রী এ বৃত্তির জন্য আবেদন জমা দেন। এর মধ্য থেকে ৩২ জন এ শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্রী সেগুফতা আনজুম হুমা । ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভেনাডেট গেরী লিটল ( Bernadette Gray-Little) এক বিবৃতিতে – হুমাকে ক্যানসাস রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য প্রতিভা বলে উল্লেখ করে বলেন- সে (হুমা) শুধু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নয়; তাঁর কথা এখন আন্তজাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে। তাঁর এ সাফল্যের জন্য দি সিটি অব উচিটা, সিটি অব বেল ইয়ার,ইসলামিক সোসাইটি অব উচিটা, বাংলাদেশ কমিউনিটি, বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অরগানাজেশন তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এদিকে তাঁকে দি সিটি অব বেল ইয়ার এর মেয়র ডেভিড অসটিন (David Austin) এর পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হুমা ( ১৯৯৬ সাল) দুবছর বয়সে বাবার সাথে আমেরিকায় আসেন। সেই থেকে ক্যানসাস রাজ্যের বেলইয়ার সিটিতে বসবাস করেন। ২০০১ সালে তার স্কুল জীবন শুরু । স্কুল জীবন শুরুর ৩বছরে ২০০৩ সালে গ্রিফটেড প্রোগামে অংশ নেন। ২০০৮ সালে স্টুডেন্ট অব দি ইয়ার (বর্ষ সেরা ছাত্র) মনোনীত হন। ২০১২ সালে জাতীয় পযায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ২০১২ সালে ডিপ্লোমাসহ (আই বি প্রোগাম ) হাইস্কুল গ্রেজুয়েশন শেষ করেন। এরপর ক্যানসাস ইউনিভাসিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ালেখা শুরু করেন। ২০১৩ সালে (Muslim students public affairs committee- mpac) এর ডেলিগেট মেম্বার হিসেবে ইউএস সিনেট-কংগ্রেস দের সাথে ওয়াশিংটন ডিসির হোয়াইট হাউসে ”লিডারশীপ প্রোগামে” ইন্টার্নীশীপ করেন। এবছরে তিনি ক্যানসাস ইউনিভাসিটির স্টুডেন্ট সিনেট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে মুসলিম স্টডেন্ট এসাসিয়েশনের সভাপতি পদে নিবাচিত হন। বাসিলোনা-স্পেনে Study abroad এর অধিনে উচ্চতর শিক্ষা-আন্তজাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ২০১৪ সালে ইউনিভাসিটি অব ক্যানসাসের নীতিনির্ধারণী সংস্হা ইউনিভাসিটি সিনেটের নিবাহী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে সিভিল রাইটস এন্ড হিউম্যান রাইটস ইন্টার্নশীপে অংশ নেন। এবছর ক্যানসাস ইউনিভার্সিটি তাঁকে “ Women of Distinction “ নির্বাচিত করেন।
হুমা বলেন – জীবনের শুরু থেকে একজন অভিবাসী পরিবারের সদস্য হিসেবে নিজেকে নানাপদে হোঁচট খেতে হয়েছে। তাই জীবন থেকে নেয়া বাস্তবতায় দাড়িয়ে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে যাত্রা শুরু করি। মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় মুসলিম ঐতিহ্য হিসেবে মাথায় হিজাব পরিধান করি। এ নিয়েও নানা সমালোচনাও সইতে হচ্ছে বলে তিনি জানান। হুমা জানান- বণ-বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে Color collective এবং Imagine নামে দুটি সংগঠন দাঁড় করাতে হয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমেরিকায় আসা নানাবণের মানুষের অধিকার সচেতনতামূলক কাজে জড়িয়ে পড়ি। বিশেষ করে ক্যানসাস ইউনিভাসিটিতে বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের যেকোন সমস্যা সমাধানে ভুমিকা পালন করি। যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নিবাচনে অভিবাসী ভোটারদের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানামুখি হুমকির শিকার হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
হুমা’র বাড়ী বাংলাদেশের চট্টগ্রামের রাউজানের মোহাম্মদপূর গ্রামে। মা আন্জুমান আরা । একমাত্র বোন তাহমিনা আনজুম তৃষা (মাস্টার্স অধ্যয়নরত) উচিটা স্টেট ইউনিভাসিটিতে একাডেমিক এডভাইজর হিসাবে কাজ করছেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ শামসুল আনোয়ার জামাল (শিক্ষক) জানান, ছোটবেলা থেকে জেদী মেয়ে হুমার মধ্যে জানার আগ্রহ ছিল প্রবল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সে নিয়মিত অনুশীলন করেছে। তাই আমেরিকায় বসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রীতিমত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আত্মপ্রচার বিমুখ হুমা’ কোন অপশক্তির কাছে হার মানতে নারাজ। তিনি এগিয়ে যেতে চান। কবির ভাষায়- আমি যাব; যেখানে যাইনি কোন নেইয়ে সাহস করে ।