দেশের বাইরে থাকলে বোঝা যায় দেশ কত আপন। এমনকি রয়াল বেঙ্গল টাইগার দেখলেও জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। চলতি পথে কেউ বাংলা বললে কান খাঁড়া হয়ে যায়। দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, ভাই আপনি কি বাংলাদেশি। তাই যেখানেই বাংলার স্বাদ পাই সেখানে ছুটে যাই।
কয়েক দিন আগে বন্ধু শরিফ বলল, দোস্ত চলো যাই, বাংলা স্বাদের মুরগি খাব।
তার এ কথার মানে প্রথম বুঝিনি। তখন মনে পড়ে গেল, শৈশবে বাসায় মেহমান আসলে মা সারা বাড়ি দৌড়ে মুরগি ধরতেন। তারপর কেটে রান্না করতেন। এখনো গ্রামবাংলায় মুরগি খোঁজা শব্দটি বেশ শোনা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় স্টোরগুলোতে অধিকাংশ প্যাকেটজাত ফ্রোজেন খাবার। মাংসজাত খাদ্যের মেনুতে তুরস্কের মুরগির বেশ দাপট। এসব খাবারের গুণগতমানও রয়েছে। এখানে তুলনামূলকভাবে মুরগি মাংসের দাম কম। এসব মুরগির মাংস খেতে খেতে আর ভালো লাগে না। আমাদের মতো ছোট শহরে যারা থাকেন তাদের অনেকটা ফ্রোজেন খাবারের ওপরই নির্ভর করতে হয়।
তাই শরিফ বলার পর একদিন আমরা কয়েকজন মুরগির খোঁজে ম্যালভেন শহরে গেলাম। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যের উচিটা শহর থেকে এক ঘণ্টা ড্রাইভ করে ম্যালভেনে যেতে হয়। ছোট্ট শহর। এ শহরে মাত্র ৬ হাজার ১১১ জন লোকের বসবাস। যুক্তরাষ্ট্রের বড়-বড় শহরের আশপাশে ছোট শহরগুলোতে হাঁস-মুরগি ও ছাগলের অভাব নেই। অবশেষে পৌঁছে গেলাম ডেভিডের খামার বাড়িতে। ছয় একর জায়গায় ছাগল, মুরগি ও ঘোড়া পালন করেন তিনি।মুরগি কাটার দৃশ্য
ডেভিড আফগান ফেরত এক সেনাসদস্য। গত ১০ বছর ধরে পশু পালন ও বিক্রি করছেন। খুব সহজ-সরল প্রকৃতির খামার মালিক ডেভিড জানালেন, দীর্ঘদিন সামরিক জীবন শেষে একটু নিভৃতে অথচ প্রকৃতির কোলে তার জীবনটা খুব আরামে কাটছে। ব্যবসার পাশাপাশি প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা ছাগল, মুরগি, ঘোড়া ও ডগি নিয়ে বেশ ভালোভাবে কাটছে তার জীবন। রাত-দিন খামারে প্রকৃতির ছায়ায় তার বসবাস। লতায়-পাতায় জড়ানো তার ছোট্ট বাড়ি খামারের এক কোণে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাসসহ প্রায় রাজ্যে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি—এ তিন মাস কনকনে শীত পড়ে ও তুষারে ঢাকা থাকে। এ সময় কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া বাড়তি ঝামেলা। শীতের সঞ্চয়ে এসব খাদ্য (মুরগি) সংগ্রহ।
বলা যায়, একেবারে বাংলাদেশি স্টাইলে মুরগি কাটতে গিয়ে আঙুল কাটাকে পাত্তাই দিলেন না বন্ধু তানিয়া ও শরিফ। তারপর ডেভিডের প্রাইমারি ট্রিটমেন্ট। এত কষ্ট যেন আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মিশে গেল। কাজ শেষে আবারও উচিটা শহরে। প্রতি পিস মুরগি আট ডলার। মূল্যের ব্যাপারে ডেভিড বলেন, শখের খামারে লাভ আশা করা যায় না। এক কথায় বলা যায়, ব্রেক ইভেন্ট (নো প্রফিট, নো লস)।