আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্ক

একাত্তরে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চান মার্কিন সাংবাদিক গ্যালোওয়ে

joegallowayএকাত্তরে বাংলাদেশে চালানো পাকিস্তানি গণহত্যাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের স্বীকৃতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন দেশটির সাংবাদিক ও লেখক জোসেফ লি জো গ্যালোওয়ে। নর্থ ক্যারোলিনার র‌্যালেই শহরে গত ২ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে আগ্রহী প্রবাসীদের এক আয়োজনে তিনি বলেন, একাত্তরের সেই ভয়াল ঘটনা এখনও তাকে তাড়া ফেরে।

গ্যালোওয়ে জানান, একাত্তরে দুইবার তিনি ঢাকায় যান; প্রথমবার জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে ডিসেম্বরে বিজয় অর্জন পর্যন্ত ঢাকায় ছিল তার অবস্থান। তিনি বলেন, “পঁচিশে মার্চ রাত থেকে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নৃশংসতা চালানোর পর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী দেখানোর চেষ্টা করে যে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। এজন্য ওরা কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিক নিয়ে এক সফরের ব্যবস্থা করে।” ওই সফরে থাকা গ্যালোওয়ে বলেন, “তারা সাংবাদিকদের ছোট একটি বিমানে দূর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু এলাকা দেখায়, বলে সর্বত্র স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। “কিন্তু আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। এজন্য আমি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের আড়ালে চলে যাই, আশ্রয় নিই ঢাকার মার্কিন কনস্যুলেটে।”
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড পাকিস্তানিদের নির্বিচার গণহত্যার ঘটনায় তার কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন জানিয়ে গ্যালোওয়ে বলেন, “মুক্তিকামী বাঙালির প্রতি সংবেদনশীল এই কূটনীতিক নিজের জীবন ও চাকরির ঝুঁকি নিয়ে কনস্যুলেট ভবনের একটি কক্ষ আমাকে ব্যবহারের অনুমতি দেন।” এরপর যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করে পাঠানোর কাজ শুরু করেন এক সময়ে ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালের (ইউপিআই) রিপোর্টার গ্যালোওয়ে। কোনো সময় লুকিয়ে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে, কখনও কনস্যুলেটের কর্মচারীদের কাছ থেকে থেকে গণহত্যা, ধ্বংস, দুর্ভোগের তথ্য জেনে তা পাঠাতে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিকগুলোয়।

এরপর ফিরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। কয়েকমাস পর বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ যখন চূড়ান্ত পর্বে, সেই ডিসেম্বরে ফের ফেরেন ঢাকায়। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের বিভিন্ন পর্যায়ের সাক্ষী মার্কিন এই সাংবাদিক। শেষ সময়ে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালকে রেডক্রসের আওতায় নেওয়ায় সাংবাদিক গ্যালোওয়ে তার পরিচালনার দায়িত্ব নেন। সেখানে সামরিক বাহিনীর শেষ সাংবাদিক সম্মেলনে জেনারেল নিয়াজিকে তার সামরিক ব্যাজ ও অস্ত্র বাইরে রেখে ঢুকতে বাধ্য করেন। এ সময় ক্ষুব্ধ নিয়াজি তাকে গুলি করার হুমকিও দিয়েছিলেন বলে জানান গ্যালোওয়ে। ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির অবিস্মরণীয় বিজয়ের পর রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী হত্যার স্থান পরিদর্শন করেন এবং এই নৃশংসতার সমালোচনা করে লেখেন এই সাংবাদিক। ইতোমধ্যেই একাত্তরের ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার দাবিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর নিউ ইয়র্কের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ বিষয়ে কাজ করার কথা বলেন গ্যলোওয়ে। তিনি বলেন, “পাক বাহিনীর গণহত্যার ঘটনাবলি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। তাহলেই হানাদার বাহিনীর বিচার করা সহজ হবে আন্তর্জাতিক আদালতে। “আর এ স্বীকৃতি আদায়ের জন্যে যে কোনো সহযোগিতা দিতে আমি সংকল্পবদ্ধ। কারণ এমন জঘন্য অপরাধকে কোনোভাবেই বিচারের বাইরে রাখা সমীচীন হবে না।”
অনুষ্ঠানে তার স্ত্রী গ্রেস গ্যালাওয়েও উপস্থিত ছিলেন। কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট রাশিদুল ইসলাম রুবেল ও চিকিৎসক তাসনিম ইসলাম আয়োজিত অনুষ্ঠান আয়োজক রুবেলের নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘ওরা আসবে’ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে ড. শামসুদ্দিন ইলিয়াস, মুখলেসুর রহমান, মারুফ জাহাঙ্গীর, রান্ডি ভোলের, মারজুক ইসলাম অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি ফিলাডেলফিয়ায় বসবাস করা শহীদ পরিবারের সন্তান ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং নর্থ ক্যারোলিনার ড. অমলেন্দু চ্যাটার্জী যৌথভাবে পরিচালনা করেন।