প্রবাসের রাজনীতি

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে তিক্ততাপূর্ণ নির্বাচনী প্রচারণা শেষে আজ স্থানীয় সময় সকাল ছয়টায় দেশব্যাপী শুরু হলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। দেশের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার জন্য ভোট দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রবাসী।

আজ আনুষ্ঠানিক ভোট গ্রহণ শুরু হলেও আগাম ভোট গ্রহণ চলছে আগে থেকেই। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহূর্তের একাধিক জরিপে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে গড়ে ৩ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া এমন যে সারা দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের সমর্থনও বিজয়ের নিশ্চয়তা দেয় না। জিততে হলে একজন প্রার্থীকে সংগ্রহ করতে হয় ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোট, যার মোট সংখ্যা ৫৩৮টি। দুটি অঙ্গরাজ্য ছাড়া বাকি অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রার্থীরা সেই ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে বিজয়ী হন, আর এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট অর্থাৎ ২৭০টি পেলেই একজন প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেন।

আজ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারে ডিক্সভিল নচ নামের একটি গ্রামে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয় বলে ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এবারের নির্বাচনে এটিই কোনো ফল ঘোষণা। দ্রুত এই ফলাফল দেওয়ার কারণও আছে। গ্রামটিতে ভোটার মাত্র আটজন। এর মধ্যে হিলারি পেয়েছেন চার ভোট। দুটি পড়েছে ট্রাম্পের বাক্সে। আর লিবার্টেরিয়ান গ্যারি জনসন পেয়েছেন একটি ভোট। আরেকটি ভোট সঠিকভাবে দেওয়া হয়নি বলে গণনা করা হয়নি।

প্রচারণার শেষ মুহূর্তে দুই প্রার্থীই ‘বড় যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে পরিচিত নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও মিশিগান চষে বেড়ান। হিলারি ‘একটি আশাবাদী, সমন্বয়বাদী এবং বড় হৃদয়ের’ যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। আর প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প তাঁকে ভোট দিয়ে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাকে পরাজিত করার এক অসামান্য সুযোগ’ না হারানোর জন্য আহ্বান জানান।

শুরু থেকেই এবারের নির্বাচনী প্রচারণা ছিল তিক্ততায় ভরপুর। মুসলিম, হিস্পানিক, কালো এবং নারীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ নানা বক্তব্য দিতে থাকেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মুসলিমদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা, মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের মতো কথাও বলে ফেলেন তিনি। ট্রাম্পের এসব বেফাঁস মন্তব্যের কড়া সমালোচনাও হয়। রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই ট্রাম্পের প্রতি তাঁদের সমর্থন প্রত্যাহার করেন। খোদ রিপাবলিকান পার্টির স্পিকার পল রায়ান এ তালিকায় ছিলেন। তাতে অবশ্য দমে যাননি এই ধনকুবের।

নির্বাচনের আগে প্রধান দুই প্রার্থী তিনটি নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নেন। সেই বিতর্কে নির্বাচনী সমাবেশের বিদ্বেষ, তিক্ততাকে মাঝেমধ্যেই ফিরে আসতে দেখা যায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় হিলারির দাপ্তরিক ই–মেইলে ব্যক্তিগত তথ্য আদান–প্রদান ট্রাম্পের তুরুপের তাস হয়। গত জুলাইতে এফবিআই প্রধান কোমি বলেছিলেন, ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় নিজের ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভারে স্পর্শকাতর জিনিসপত্র রাখার ক্ষেত্রে অসতর্ক থাকলেও তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তবে গত ২৮ অক্টোবর সেই কোমিই হঠাৎ করে ই–মেইল তদন্ত নতুন করে শুরু করার ঘোষণা দেন। এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন হিলারিসহ ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব। নির্বাচনী হাওয়ায় এর বেশ প্রভাবও পড়ে। দলীয় মনোনয়ন লাভের পর প্রায় প্রচারণায় সময় এগিয়ে থাকা হিলারির সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যবধান কমতে থাকে। তবে গত রোববার কোমি মার্কিন সদস্যদের দেওয়া এক চিঠিতে বলেন, হিলারি ক্লিনটনের নতুন ই-মেইল তদন্ত করে বেআইনি কিছু পাওয়া যায়নি। এফবিআইয়ের এ সিদ্ধান্তে অবশ্য নাখোশ হন ট্রাম্প।

নির্বাচনে এমন নানা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর হন হিলারি। তিনি প্রচারণায় সঙ্গী হিসেবে পান স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ওবামা-পত্মী মিশেলকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে অযোগ্য বলে সমালোচনা করেন তাঁরা।
নির্বাচনী প্রচারণা চলার সময়ই অন্তত ১০ জন নারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। ট্রাম্প এসব অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দেন।
প্রচারণার সময়ের এই বিদ্বেষ এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে সংশয় সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনী কেন্দ্রে থেকে ভোট কারচুপি ঠেকানোর জন্য দলীয় সমর্থকদের ট্রাম্পের আহ্বান এ সংশয়কে আরও পোক্ত করেছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে উঠেছে যে সম্ভাব্য গোলযোগ রুখতে পেনসিলভানিয়া ও অ্যারিজোনার নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কেন্দ্রের আশপাশে বেশ কিছু কড়াকড়ি আরোপ করতে বাধ্য হয়েছে।