প্রবাসের রাজনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ২০১৬: প্রচারণার চাপে ক্লান্ত মার্কিনরা

hillary
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি মাত্র হাতে গোনা কয়েক দিন। এটা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অনেকের জন্যই হাঁফ ছেড়ে বাঁচার ব্যাপার। প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম দেখতে দেখতে দেশটির বেশির ভাগ মানুষ এখন ক্লান্ত। অন্তত মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা সে কথাই বলছেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (এপিএ) এক জরিপ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি মানুষ নির্বাচনী প্রচারের চাপে একরকম অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। সাম্প্রতিক মার্কিন ইতিহাসের সম্ভবত সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে এবার।
লস অ্যাঞ্জেলেসে কাজ করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জুডি ব্লুম। তাঁর ভাষায়, ‘নির্বাচন এলে মানুষ এমনিতেই কিছুটা চাপের মধ্যে পড়ে। তবে এবারের মতো এত চরম অবস্থা আগে কখনো দেখিনি।’
দৈনন্দিন ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ইস্যুতে প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও দাবি ভোটারদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় তাদের বিভ্রান্তও করে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ব্লুম বলেন, এবারের নির্বাচনী প্রচারণা খুবই নেতিবাচক হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বীরা একে অপরকে দুষছেন। মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলছেন। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে। এ সবকিছু মিলে মানুষের মনে একধরনের নৈরাশ্য তৈরি হয়েছে। এমনকি অনেকে এই নির্বাচনী প্রচারের অত্যাচার এড়াতে কানাডায় চলে যাওয়ার আভাস দিয়েছেন।
রিপাবলিকান পার্টি মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের প্রচারে বলছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে স্বাস্থ্যসেবা এবং সিরিয়া বা বাণিজ্য নিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘সর্বনাশা’ নীতি বহাল থাকবে।
অভিবাসীদের প্রতি বিরূপ অবস্থান নিয়েছেন ট্রাম্প। অভিবাসীদের অনেকেই ‘ধর্ষক’ এবং ‘অপরাধী’—এ মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে সীমান্ত খুলে দেবেন বলে অভিযোগ তাঁর।
অন্যদিকে হিলারিও নিজের প্রচারে ট্রাম্পকে ছেড়ে কথা বলছেন না। তিনি রিপাবলিকান প্রার্থীকে ‘অস্থিতিশীল’ আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নারী নিগ্রহ এবং যৌন হয়রানির একাধিক অভিযোগের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন হিলারি।
পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনার মনোরোগ চিকিৎসক রবার্ট ব্রাইট বলেন, নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলা অথবা অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে মার্কিনদের মধ্যে এত বেশি মাত্রার উদ্বেগ আর দেখা যায়নি। তিনি একজন নারী রোগী পেয়েছেন, এই নির্বাচনী ডামাডোলে যাঁর রাতে ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে। আরেক রোগী বলেছেন, তিনি বরং মরে যেতে চান—তাতে যদি রাজনৈতিক ডামাডোলের যন্ত্রণা থেকে রেহাই মেলে।
প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন নিজের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলেন ‘ইয়েস উই ক্যান’ স্লোগান নিয়ে, তখন দেশবাসী ঐক্যের পথে এগিয়েছিল। আর এবারের নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রচারে জনগণের মধ্যে যেন ভয়টাই বেশি প্রভাব বিস্তার করছে।
ব্রাইট আরও বলেন, লোকে নিজেদের আর্থিক নিরাপত্তা চায়, জাতীয় নিরাপত্তা চায়। সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্ক থেকে মুক্তি চায়।
ব্রাইট বলেন, নারীদের প্রতি অবমাননাকর কথাবার্তা বলতে বাধেনি ট্রাম্পের। এ কারণে নারী ভোটারদের একটি অংশ ভবিষ্যতের আশঙ্কায় একধরনের মানসিক যন্ত্রণায় আক্রান্ত হচ্ছে।