নিউ ইয়র্ক সংগঠন সংবাদ

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ

nyw3নিউইয়র্কে বাংলাদেশি নারী নাজমা খানমের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালি অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের স্টারলিং বাংলাবাজার এভিনিউ এলাকায় বাংলাদেশ-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের উদ্যোগে গত বৃহস্পতিবার রাতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে নাজমা খানমের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রবাসীদের নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আইনজীবী মো. এন মজুমদার মাস্টার অব ল’ এর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি নজরুল হকের পরিচালনায় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের ডাইরেক্টর আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী খসরু, বাফার প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিন, ব্রঙ্কস বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন, ব্রঙ্কস বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এন ইসলাম মামুন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট দিদারুল ইসলামসহ বাংলাদেশি কমুনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

এছাও নানা শ্রেণি পেশার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী যোগ দেন এ সমাবেশে। সমাবেশে আইনজীবী মো. এন মজুমদার ধর্মীয় বিদ্বেষমূলকভাবে নাজমা খানমকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, মুসলিম পোশাক পরিহিত ৬০ বছর বয়সী নাজমা খানমের কাছে থেকে কিছুই নেয়নি দুর্বৃত্ত। তাই এটি হেইট ক্রাইম ছাড়া আর কি হতে পারে। বাংলাদেশিদের ওপর অব্যাহত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রবাসীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
বর্ণবৈষম্য হামলাসহ সকল সন্ত্রাসী হামলা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

সমাবেশে বক্তারা সম্প্রতি নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের ওপর বেশ ক’টি হামলাসহ মর্মান্তিক সব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করে এসব বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মেয়রের প্রতি জোর দাবি জানান। সমাবেশ থেকে সন্ত্রাসী বর্ণবাদী হামলার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়া হয়। এসময় বর্ণবৈষম্য হামলাবিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত লেখা প্ল্যা কার্ড বহন করা হয়। সমাবেশে নিহত নাজমা খানমের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন ও তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া মুনাজাত করা হয়। দোয়া মুনাজাত পরিচালনা করেন অলিউর রহমান।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে গত ৩১ আগস্ট বুধবার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ৯টায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান ৬০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নারী নাজমা খানম। তাকে নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে জ্যামাইকা হিল্‌‌স এলাকায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়। স্বামীসহ কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার সময় নিজ বাসার দু’ব্লকের মধ্যে ১৬০-১২ নরম্যাল রোডে শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষিকা নাজমা খানমকে হত্যা করা হয়। নিউইয়র্ক মুসলিম পুলিশ অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মোহাম্মদ কবিরের খালা নাজমা খানম ৩ সন্তানের মা। তার এক সন্তান নিউইয়র্কে এবং অপর দু’জন থাকেন বাংলাদেশে।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট ওই এলাকার কাছাকাছি দূরত্বে ওজনপার্কে গুলি করে হত্যা করা হয় বাংলাদেশি ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকঞ্জি (৫৫) এবং তার সাথী তারা মিয়াকে (৬৪) । ওই হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে অস্কার মরেল (৩৫) নামক এক হিসপ্যানিককে। তবে এখন পর্যন্ত ইমামসহ দুই বাংলাদেশি হত্যার ঘটনাকে ‘হেইট ক্রাইম’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এ নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ মুসলিম আমেরিকানরা দারুন ক্ষুব্ধ।
এদিকে, ইমাম হত্যাকাণ্ডের ১৭ দিনের ব্যবধানে বিনা কারণে নাজমা খানমকে হত্যার ঘটনায় প্রবাসীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এধরনের চোরাগুপ্তা হামলার ঘটনায় নিরাপদ বোধ করছেন না প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিশেষ করে বিগত কয়েক মাসে নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের ওপর বেশ ক’টি নিষ্ঠুর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মারাত্মক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।