সংস্কৃতি ও বিনোদন

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রামাণ্যচিত্র ‘ঝলমলিয়া’

canadaএক দুপুরে সুমাইয়া বসে আছে দীঘির পাড়ে। দশ বছরের সুমাইয়া স্কুলে যায় না। মাঠে গরু ছাগল চরায়, ঘরে বসে বিভোর হয়ে টিভি দেখে। সুমাইয়ার বাবা মাছ ধরে জীবন চালায়। সুমাইয়ার মা ওর বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সুমাইয়ার মায়ের দম ফেলার সময় হয় না। ঘরদোর সামলে ছুটতে হয় তাকে মাঠে।

মাঝে মাঝে নদীর ভাঙাপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। বাতাসে ওড়ে তার শাড়ির আঁচল। সন্ধ্যায় ঝলমলিয়ার ঘাটে জল আনতে যেতে যেতে অপেক্ষায় থাকে, কথা বলে কারো সাথে। সমস্ত দিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরে এই একটুকু তার মনের শান্তি। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে মানুষ টিকে থাকে, মনের সাথে যুদ্ধ করে মানুষ বাঁচতে পারে কি! ঝলমলিয়ার জলে টলমল করে মানুষের মুখচ্ছবি। দীঘির মিষ্টি জলে কখনো ঝড়ে পড়ে ক’ফোটা চোখের নোনা জল। মানুষের অন্তরে অচিন যে পাখির বাস, সে কেবল খাঁচা ছেড়ে উড়ে যেতে চায় বারে বারে। মুক্তি কি শেষমেষ মেলে কারো!

দিন যায়, বদলায় পরিবেশ। প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা মানুষের জীবনে তার প্রভাব পড়ে। প্রকৃতির ইচ্ছায় মানুষের ঘর ভাঙে, মানুষ ভীটে ছাড়া হয়। নিজের ইচ্ছায়ও মানুষ ঘর ভাঙে, ঘর ছাড়া হয়। মানুষ বদলালে কতটুকু বদলায়! জীবন ভাসতে ভাসতে কখনও কী কোন পথ খুঁজে পায়!

বাংলাদেশের উপকূলীয় গ্রাম, গ্রামীণ জীবন ও মানুষের জীবনযাত্রাকে এমন করেই পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ‘ঝলমলিয়া’ ছবিতে। ঘূর্ণিঝড় আইলা পরবর্তী ছয় বছর ধরে এই চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে মংলা বন্দরের কাছে দক্ষিণাঞ্চলের একটি গ্রামে।

বাংলাদেশের প্রামাণ্যচলচ্চিত্র নির্মাতা সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল পরিচালিত ‘ঝলমলিয়া’ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক স্টেটের রাজধানী আলবেনি শহরে পাঁচ দিনব্যাপী ক্যাপিটাল সিনেমা কালচারাল এক্সচেঞ্জ সিনেমা ল্যাব ও প্রদর্শনীর সমাপনী চলচ্চিত্র হিসেবে এটি দেখানো হবে।

আগামী ১৫ অক্টোবর চেক প্রজাতন্ত্রের বার্নো শহরে ইয়োরোপের পরিবেশ বিষয়ক চলচ্চিত্র উৎসব, ৪২তম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল ইকো ফিল্মে বাংলাদেশি এন্ট্রি হিসেবে প্রতিযোগীতা বিভাগে ‘ঝলমলিয়া’ এর ইয়রোপিয় প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হবে। ইউরোপের পরিবেশ আন্দোলনের সুতিকাগার হিসেবে খ্যাত চেক প্রজাতন্ত্রের বার্নো শহরে এ উৎসব চলবে অক্টোবরের ১২ থেকে ১৫ পর্যন্ত।

চলচ্চিত্রের বিষয় নিয়ে পরিচালক সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল বলেন, “সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় পুরো অঞ্চলজুড়ে সুপেয় পানির অভাব। দীঘিটি হয়ে আছে সেই অঞ্চলের মানুষের পানীয় জলের এক মাত্র উৎস। ২০০৯ সালে সাইক্লোন আইলায় পুরো অঞ্চল প্লাবিত হলেও দীঘিটি রক্ষা পায়। এই দীঘিকে ঘিরেই এই অঞ্চলের মানুষের জীবন যাপন, লৌকিক-অলৌকিক গল্প আর কল্পকথা।”