৭০তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে যুক্তরাষ্ট্রে ভার্জিনিয়া রিজ কার্লটন হোটেলে সমবেত হন ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়াসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা নির্বাচনের নামে মানুষ হত্যা করছে, তারাই সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদের মূল হোতা। জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের মদদদাতা ও উস্কানিদাতাদেরও বিচার করা হবে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীকে ৭০তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এদিন রিজ কার্লটন হোটেলে সমবেত হন ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়াসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী জন্মদিনের কেককাটা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করেন। সৈয়দ হকের মৃত্যুর কারণে জন্মদিনের অনুষ্ঠান না করার কথা আগেই জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বলেন, দেশ ছাড়ার আগে হাসপাতালে আমি সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে দেখা করতে যাই। তখন আমার মনেই হয়নি তিনি চলে যাবেন। সৈয়দ হকের মনের জোর ছিলো ভীষণ।
দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে কাজ করতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে, জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসে থাকেন, আপনারাও কিন্তু এই জঙ্গিবাদবিরোধী আমরা শিক্ষক, মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের, তাদের যারা ধর্মীয় শিক্ষাগুরু, আমাদের অভিভাবক, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী আমরা সবাইকে নিয়ে এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসহ প্রত্যেকে, সবাই মিলে কিন্তু এক হয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী ভূমিকা নেওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। অপরাধীদের বিচার হচ্ছে। জতির জনকের হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে। দৃঢ়চিত্তে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দেশ বিরোধীদের ঠাঁই আর স্বাধীন বাংলাদেশে হবে না।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর খুনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি যতদিন ক্ষমতায় ছিলেন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই ছিলেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় করতে আমাদের সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। দেশের সবকটি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লাখে উন্নীত হয়েছে। মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোজন করা হয়েছে। যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করা হয়েছে।
শিশু ও নারীর সার্বিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়ন ভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও।
প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে সফলতা অর্জনসহ নানা বিষয়ে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদেরকে আরও বেশি করে দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার আহ্বান জানান।
জন্মদিন উপলক্ষে নিজের জীবনসংগ্রাম নিয়ে রচিত ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য সংগ্রাম’ নামে একটি স্মারক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জয়ীতা প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী সাংবাদিক ইয়াসিন কবির জয় প্রকাশনাটির একটি কপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন।