আটলান্টা

আটলান্টায় মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যাল

atlantaaজর্জিয়া সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে আটলান্টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে জাঁকজমকপূর্ণ বহুল প্রত্যাশিত মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যাল। অনুষ্ঠানে এক ঝাঁক বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের ফ্যাশন শো ও নৃত্যানুষ্ঠান, ভারতীয় বলিউড ফিউশন নৃত্য, আমেরিকান মিষ্টি কিশোরী জ্যামেরা পরিবেশিত সংগীতসহ বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পী মুক্তা সারওয়ারের গানের মূর্ছনায় দর্শক-শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছেন প্রাণোচ্ছল উচ্ছ্বাসে। ঠিক তেমনিভাবে আবার একই মঞ্চে মাল্টি কালচারের নামে অর্ধনগ্ন নারীদের মিসরীয় নৃত্যের পরিবেশনায় অপ্রত্যাশিত বিব্রতকর ও অসহনীয় বেশ কিছু মুহূর্ত কাটানোর ঘটনাও ঘটেছে অনুষ্ঠানে।

তবে মিসরীয় বেলি নৃত্যের পর্বটি ছাড়া মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যালের বাদবাকি পর্বগুলো ছিল প্রশংসনীয় এবং ভিন্নধারার বর্ণাঢ্য আমেজে পরিপূর্ণ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর স্বাগতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাস্কর চন্দের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর বাঙালির আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঢোল বাজিয়ে সকলকে বরণ করে নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতি মোহন জব্বার, সাধারণ সম্পাদক উত্তম দে, প্রধান উপদেষ্টা দিদারুল আলম শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
মোহন জব্বার ও উত্তম দে অনুষ্ঠানটিকে সফল করে তুলতে সকল কলাকুশলী, শিল্পী, সংগঠক, মিডিয়া ও অতিথিদের কৃতজ্ঞতা জানান। দিদারুল আলম বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান এই প্রথম নয়, ভবিষ্যতেও এই সংগঠন আরও ভালো ও বেশি বেশি বৈচিত্র্যময় আয়োজনে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
মধ্য পর্বে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মুখ্য স্পনসর এম অ্যান্ড জে ফাউন্ডেশনের সভাপতি জামিল ইমরান সকলকে এ ধরনের মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্র্যাটসের নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের মঞ্চে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেন।
বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণের ফ্যাশন শো ও নৃত্যানুষ্ঠানের অভাবনীয় চিত্তাকর্ষক পরিবেশনা দর্শক শ্রোতাদের মনে দীর্ঘদিন দাগ কেটে থাকবে। বিশেষ করে সমাপনী পর্বে নৃত্য ও গানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে শিশু-কিশোরদের প্রাণচঞ্চল আবেগ উচ্ছ্বাসের ফল্গুধারা দর্শকদের স্বদেশপ্রেমের নস্টালজিয়ায় অভিভূত করে তোলে। এই পর্বের সমাপ্তির পর পরিচালক রিজওয়ানা রুমু শিশু-কিশোরদের এই সুন্দর পারফরম্যান্সের জন্য অভিভাবক ও আয়োজক সংগঠনের কর্মকর্তাদের কৃতজ্ঞতা জানান।
আমেরিকার মূলধারার ব্যান্ড গ্রুপ পুসিফুটের সুরেলা কণ্ঠের প্রতিশ্রুতিশীল মিষ্টি কিশোরী শিল্পী জ্যামেরার গান দর্শকদের চিত্ত জয় করতে সক্ষম হয়। এর আগে বাংলাদেশি মাহি সুমনও জনপ্রিয় গান গেয়ে চমক সৃষ্টি করেন। সুমনের সঙ্গে জ্যামেরা একটি বাংলা গানেও কণ্ঠ দেন, যা দর্শক-শ্রোতাদের আপ্লুত করে তোলে।
শেষ পর্বে বাংলাদেশ থেকে আগত জনপ্রিয় শিল্পী মুক্তা সারোয়ার মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা গানটি গেয়ে তার পারফরম্যান্স শুরু করেন। এরপর বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান পরিবেশন করে সকলকে মুগ্ধ করেন। পরে আয়োজক গোষ্ঠীর ধন্যবাদ প্রদানের মধ্য দিয়ে মধ্যরাতে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে।
এম অ্যান্ড জে ফাউন্ডেশনের আর্থিক অনুদানে অনুষ্ঠানটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মোহন জব্বার, উত্তম দে, ভাস্কর চন্দ, নেহাল মাহমুদ, শেখ জামাল, মিনহাজুল ইসলাম, নুরুল তালুকদার, ইলিয়াস হাসান, কায়েদুজ্জামান, সুহেল হাসান, সৈয়দ কামরান, রাশেদ চৌধুরী, আবুল হাসান ও শহিদুল ইসলাম প্রমুখ সংগঠকসহ উপদেষ্টামণ্ডলী যথাক্রমে দিদারুল আলম, সলিমুল্লাহ সলি, মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন ও রফিক হাসান। অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন বাংলা ভাষায় সুভশ্রী নন্দী ও ইংরেজিতে এম অ্যান্ড জে ফাউন্ডেশনের কারমে ইস্ট্রেডা।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্যায়ে বেলি নৃত্যের ওই পরিবেশনায় ঊর্ধ্বাঙ্গে শুধু ব্রা পরিহিত পোশাকে তিন রমণীর আরব্য-রজনীর স্টাইলের নৃত্যানুষ্ঠান শুরু হলে আকস্মিকভাবে মিলনায়তনে উপবিষ্ট অগণিত নারী-পুরুষদের এক অস্বস্তিকর কঠিন মুহূর্ত অতিক্রম করতে হয়। অধিকাংশ দর্শককেই ওই সময়টাতে লজ্জাবনত অবস্থায় ঘন ঘন মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখা যায়। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো আবারও একই নারীদের পারফরম্যান্স শুরু হলে অনেক নারীকে দর্শকসারি থেকে বাইরে চলে যেতে দেখা যায়। এ সময় অবশ্য পারফর্মারদের কিছুটা পর্দা অনুসরণ করতে দেখা যায়। তারা ব্লাউজ পরিধান করেন তখন। কোনো কোনো দর্শককে আবার এই দৃশ্য উৎসাহের সঙ্গে নিতান্ত মামুলি ব্যাপার মনে করে উপভোগ করেন। অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসা বাংলাদেশি নারীরা মিলনায়তনের বাইরে গিয়েই দুই মিডিয়ার দুজন প্রতিনিধিকে সামনে দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তাঁরা বাংলাদেশি কোমলমতি শিশু-কিশোর ও মুরব্বিদের উপস্থিতিতে এ ধরনের মাল্টি কালচারের নামে আপত্তিকর নৃত্যানুষ্ঠানের সমালোচনা করেন। ডজনখানেক নারী-পুরুষ তখন দুই সাংবাদিককে ঘিরে ফেলেন এবং এ ধরনের নৃত্যের কথা আগে জানলে ছেলেমেয়ে ও মুরুব্বিদের নিয়ে আসতেন না বলে অভিযোগ করেন।
একজন দর্শক এগিয়ে এসে জানান, আমেরিকায় তো বিভিন্ন দেশের সংগঠনগুলির নানা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পারফরম্যান্স রয়েছে। যেমন জার্মান, আইরিশ, ল্যাটিন, ওরিয়েন্টাল বা ব্রিটিশ সংস্কৃতির নানা সংগঠন। সেগুলো থেকে দু-একটা মানসম্মত আইটেম না এনে আরব্য-রজনীর আপত্তিকর পোশাকের গার্লদের কেন মঞ্চে নামাতে হবে? মাল্টি কালচারে ভালো মন্দ তো দুটোই আছে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশিরা তো সব সময়ই এমন কিছু পিক করি, যেটা আমাদের সঙ্গে যায়! কিন্তু আজ এ ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি কেন হলো?
গুইনেট কাউন্টির এক নারী বলেন, এ দেশে ভালো মন্দ সবই আছে। আমরা ঘরে টিভিতেও ভালো-মন্দ নানা কিছু দেখি। কিন্তু কোনটা পিজি, কোনটা পিজি-১৩ আবার কোনটা আর রেটেড, সেসব বুঝে শুনেই আমরা ছেলেমেয়েদের সেসব এনজয় করতে দিই। আজকের এই অনুষ্ঠানের মিসরীয় বেলি ড্যান্সটি বাংলাদেশিদের কাছে ছিল রীতিমতো অ্যাডাল্ট গ্রুপের আর রেটেডের সমতুল্য। ব্যাপারটি আগে জানালেই বরং খুশি হতাম, বাচ্চাদের নিয়ে আর আসতাম না। নিন্দা জ্ঞাপনকারীরা জানান, আমেরিকার পথেঘাটে, মার্কেটে অনেক অশ্লীলতা, নগ্নতা চোখে পড়ে, কিন্তু আজকের অনুষ্ঠানে সপরিবারে বসে এই আপত্তিকর দৃশ্য দেখার ঘটনা সত্যি দুঃখজনক।
এদিকে নিন্দা প্রদানকারী অভিভাবকেরা কমিউনিটির স্বার্থে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অশ্লীল পর্ব না থাকে, সেই ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি প্রদানের জন্য আয়োজকদের কাছে দাবি জানান। উল্লেখ্য, জর্জিয়ার ইতিহাসে বাংলাদেশি আয়োজকদের উদ্যোগে এ ধরনের নৃত্যর ঘটনা এই প্রথম ঘটল।
মাল্টি কালচার অনুষ্ঠানের এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সন্তানদের কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে সংগঠকগণ আরও ভালো কিছু উপহার দেবেন, এটাই প্রত্যাশা করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।