কানাডা

মন্ট্রিলে শেখ হাসিনা-ট্রুডো বৈঠক : নূর চৌধুরীকে ফেরতে উপায় বের করতে মতৈক্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শুক্রবার মন্ট্রিলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর উপায় বের করার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও কানাডা। গত শুক্রবার কানাডার মন্ট্রিলের হায়াত রিজেন্সি হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ মতৈক্য হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নূর চৌধুরী কানাডায় পালিয়ে রয়েছেন।
বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্‌সানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দুই দেশের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসে নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফেরতের উপায় বের করবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আলোচনার লক্ষ্য হবে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকরের জন্য নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনা।’
শহিদুল হক বলেন, সরকার বিভিন্নভাবে নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার বহিঃসমর্পণের ব্যাপারে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বৈঠকে জঙ্গিবাদ ইস্যুকে দুই নেতা একটি ‘বৈশ্বিক সমস্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি আরও বলেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জঙ্গিবিরোধী অবস্থান এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

ভয়ংকর ব্যাধি প্রতিরোধে একত্রে কাজের আহ্বান শেখ হাসিনার

বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক তিনটি সংক্রমণ ব্যাধি এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে একত্রে কাজ করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত পঞ্চম গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ) রিপ্লেনিশমেন্ট কনফারেন্সের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধযোগ্য এবং এসব রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন অঙ্গীকার, সংকল্প ও সংহতি। একত্রে কাজ করার এই অঙ্গীকার এই ব্যাধির অবসান ঘটাতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী দেশের সব জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় বৈশ্বিক তহবিলের সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অবকাঠামো, স্বাস্থ্যপণ্য ও সেবায় বিনিয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য নিরাপত্তাকে আমার সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টায় আমরা বৈশ্বিক তহবিলের সহায়তা আশা করছি।’

এইডস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসা-সম্পর্কিত কার্যক্রমের জন্য প্রধান অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে গ্লোবাল ফান্ড। এই তহবিলের সহায়তা কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী। এর মূল লক্ষ্য বিশ্বের সেই সব এলাকা, যেখানে এসব রোগব্যাধি বড় বোঝা হয়ে আছে।

২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মারাত্মক এই তিনটি রোগের কবল থেকে ৮০ লাখ জীবন রক্ষায় ১ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার এবং ২০২০ সালের মধ্যে ৩ কোটি থেকে ৩ কোটি ২০ লাখ জীবন রক্ষায় ৪ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে পঞ্চম রিপ্লেনিসমেন্ট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর ফলে এসব দেশের ২৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সল, টোগোর প্রেসিডেন্ট ফুয়ারে গ্রেন্সিভ, গ্লোবাল তহবিলের নির্বাহী পরিচালক মার্ক আর দাইবাল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা লা ফ্রাঙ্কোফনির মহাসচিব মিখায়েল জেন সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ হস্তান্তর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে অ্যালিওট ট্রুডোকে মরণোত্তর ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার মন্ট্রিলে হায়াত রিজেন্সি হোটেলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে পিয়েরে ট্রুডোর ছেলে ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ হস্তান্তর করেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও অটোয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন এবং এতে বিশেষ অবদান রাখায় কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোকে বাংলাদেশ সরকার এই সম্মাননা দেয়।

অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সম্মাননা প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে কয়েকজন বিশ্বনেতা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, পিয়েরে ট্রুডো তাঁদের একজন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পিয়েরে ট্রুডো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষে দৃঢ়ভাবে কথা বলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কয়েকটি দেশ প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, তার মধ্যে কানাডা একটি।

শেখ হাসিনার প্রশংসায় কানাডার মন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ‘দক্ষিণ এশিয়ার স্তম্ভ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী মেরি ক্লড বিবেউ। তিনি শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় তাঁর (শেখ হাসিনা) উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। শুক্রবার জিএফ সম্মেলনে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বক্তব্য দিতে আহ্বানের সময় মেরি ক্লড বিবেউ শেখ হাসিনা সম্পর্কে এমন প্রশংসা করেন।

কানাডীয় মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মতো কিছু নেই, যিনি ‘নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার স্তম্ভ’।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রীর কর্মব্যস্ত দিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার সকালে সম্মেলনের দ্বিতীয় কর্মদিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন-বিষয়ক মন্ত্রী মারি ক্লডে বিবেউ, কানাডার গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টন এবং মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস।

প্রধানমন্ত্রী পরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও গভর্নর জেনারেলের যৌথ আমন্ত্রণে আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। বিকেলে সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগদানের কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর।