ধর্ষণের অভিযোগে চট্টগ্রামের এক শিল্পপতির বিরুদ্ধে ঢাকার একটি থানায় মামলা হওয়ার পর পুলিশ এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তবে চট্টগ্রামের ওই তরুণ শিল্পপতি ও তার পরিবার ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
গত ৩০ আগস্ট রাতে ঘটনার শিকার ওই নারী বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে চট্টগ্রামভিত্তিক খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্সের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীরের বিরুদ্ধে ঢাকার উত্তরখান থানায় এই মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত তানভীর চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক পদেও আছেন।
ঢাকার উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিবার ধর্ষণ করেছেন বলে একজন নারী অভিযোগ করেছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় মামলা করেছেন তিনি। আমরা মামলা গ্রহণ করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্নের বিষয়টি চলমান রেখেছি।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একবছর আগে ঢাকায় বসবাসরত ওই নারীর সঙ্গে সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীরের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর সূত্র ধরে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর দেখা করেন তারা। এরপর তাকে ঢাকার উত্তরখান থানা এলাকার গ্রিন ভিউ রিসোর্টে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন তানভীর। এরপর থেকে তাকে বারবার বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন এবং আরও কয়েকবার শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করেন তানভীর।
ধীরে ধীরে তানভীরের আচরণ পরিবর্তন হতে থাকায় গত ২৫ আগস্ট ওই নারী চট্টগ্রামে যান। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। এরপর ২৭ আগস্ট ওই নারী চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার মিরিন্ডা লেনে প্যাসিফিক জিন্সের অন্যতম কর্ণধার তানভীরের বাসায় যান। কিন্তু সেখানে তানভীরের পরিবারের সদস্যদের দুর্ব্যবহারের শিকার হন তিনি। শনিবার (২৯ আগস্ট) তিনি আবারও ওই বাসায় গিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হন। এর একপর্যায়ে হতাশা ও অপমানে তিনি তানভীরের বাসার সামনের রাস্তায় নিজের শরীরে ব্লেড দিয়ে জখম করতে শুরু করেন।
২০১৯ সালের ১ নভেম্বর ‘প্যাসিফিক জিন্স’-এর পরিচালক সৈয়দ তানভীরের হাতে প্রথম দফা ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা স্মরণ করে ফ্যাশন ডিজাইনার ওই নারী বলেন, ‘সে ঢাকাতে এসে আমার সাথে প্রথমবার দেখা করে গত বছরের নভেম্বরে। স্বভাবতই আমি প্রথম দেখা হওয়া নিয়ে অনেকটাই আনন্দ বোধ করছিলাম। কিন্তু আমি অবাক হলাম যখন সে প্রথম দেখা হওয়ার দিনেই আমাকে রিসোর্টে নিয়ে যায়। এতে আমার খুব মন খারাপ হয়। সবাই তো ভালবাসার মানুষের সাথে প্রথম দেখার অনেক স্মৃতি জমা করে রাখে। কিন্তু তাকে সেটি আর বলি না। সেখানে গিয়ে সে বারবার আমাকে শারীরিক সম্পর্ক করতে সিডিউস (প্রলুব্ধ) করে। সে বারবার চেষ্টা করলেও আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকি। একটা পর্যায়ে এসে সে আমার সাথে জোর করেই যৌন সম্পর্ক করে।’
পুরো ব্যাপারটাকে একটি ‘ধর্ষণের ঘটনা’ বলে বর্ণনা করে ওই নারী বলেন, ‘ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব হয়ে যাই। বলতে গেলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। কিন্তু তানভীর আমাকে বারবার বোঝাচ্ছিল যে, সে দীর্ঘদিন ফিজিক্যালি ডিপ্রাইভ (শারীরিক সম্পর্ক থেকে বঞ্চিত) থাকায় এমনটি ঘটেছে। সে বলছিল, চোখের সামনে ভালবাসার মানুষকে পেয়ে নিজেকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এরপর একটা সময়ে আমি কনভিন্স হয়ে যাই। কারণ সামহাউ তাকে আমি ভালোবাসতাম।’
প্যাসিফিক জিন্স ও চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক।