ক্যানসাস

নেচে গেয়ে উচিটায় শেষ হলো দুর্গাপূজা

আজ বাংলাদেশের হ্রদয় হতে কখন আপনি
তুমি এ অপরূপ রুপে বাহির হলে জননী
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফেরে
তোমার দূয়ার আজি খুলে গেছে ,সোনার মন্দিরে………
দরাজ কন্ঠে গাওয়া ডা.দেবব্রত ভাদূরীর রবীন্দ্র সংগীতে শেষ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যের উটিটা শহরের বাঙালী কমিউনিটি আয়োজিত দু’দিনব্যাপী সার্বজনীন দূর্গাপুজা- ২০১৬ সমাপ্তি টানা হয়েছে। কেউ যেন মা দূর্গাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছিলেন না; সকাল থেকে পূজারীরা দূর্গাদেবীর বেদীতে পুজা-অর্চনা দিয়ে আশীর্বাদ কামনা করেছেন। অনেকে শেষবারের মত আপন মননে পুজা করতে ভোলেননি। এদিন সকাল থেকে পরিবেশিত হয় শ্যামা সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, নৃত্য-কৌতুক, নাটক। চলে দুপুর অবদি। আশিষ ঘোষ হাজরার কন্ঠে রবীন্দ্র সংগীত সবাইকে ক্ষণিকের জন্য অন্যভূবনে নিয়ে যায়। দুপুরে কাবেরী ও রূপম কান্তি দেবের মুখরোচক ইলিশভাজাসহ ভক্তদের নান পদের মাংস, ডাল-সবজি আর সাদা ভাত দিয়ে ভুরিভোজন চলে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যের উচিটা শহরে সনাতনী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুই দিনব্যাপী সর্বজনীন দুর্গাপূজা শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) শুরু হয়ে গতকাল রোববার শেষ হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে যষ্টি, সপ্তমী, অষ্টমী এবং রোববার নবমী ও দশমী পালন করা হয়।
শনিবার সকাল থেকে এ পূজাকে ঘিরে এনডোভার স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন সেন্টারে ক্যানসাস রাজ্যের আটলান্টা, ওকলাহোমা, অগাস্টা, এনডোভার, এম্পোরিয়া, সেনেকাসহ বিভিন্ন শহর থেকে পূজারিরা পরিবার পরিজন নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। দিদির সঙ্গে পূজার আনন্দে যোগ দিতে ওহাইও থেকে উচিটায় ছুটে আসেন কল্লোল তরফদার।
প্রথম দিন সকাল থেকে শুরু হয় পূজার মূল পর্ব। শুরুতে হিন্দু ধর্মের মূল বাক্য পাঠ করে শোনান ডা. দেবব্রত ভাদুরী। তিনি বলেন, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রার্থনা বা পুষ্পাঞ্জলি করলে মনে শুদ্ধি ও উচ্চ ভাব লাভ করা যায়। সৃষ্টির মূল ধ্বনি ‘ওম’-এর মাঝে সৃষ্টির মূলমন্ত্র রয়েছে বলে তিনি পূজারিদের স্মরণ করিয়ে দেন।
এদিন ছোট-বড় যে যার মতো করে সেজেগুজে বর্ণিল এ দুর্গা উৎসবে অংশ নেন। দিনভর আলোঝলমলে বিশাল কমিউনিটি সেন্টারে মা-দুর্গার বেদিতে ফুল, পূজা-অর্চনা, পুষ্পাঞ্জলি, আরতি, মহাপ্রসাদ বিতরণ চলে। বিকেলে পূজা শেষে অনেকে ঢোল-বাঁশি, তবলার তালে তালে নেচে গেয়ে দুর্গা উৎসবে মেতে ওঠেন। রাতে পোলাও, খাসির রেজালা-দোপিঁয়াজা, সরষে ভাজা ইলিশ, ডালসহ নানা পদের মুখরোচক বাঙালিয়ানা খাবার পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়াও নানান রকম হাতে বানানো সন্দেশ, পিঠা-পুলি ও মিষ্টান্ন অনুষ্ঠানের খাবার টেবিলে সাজানো ছিল।
দ্বিতীয় দিন রোববার ‘আজ বাংলাদেশের হ্রদয় হতে কখন আপনি/ তুমি এ অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী/ ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফেরে/ তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে, সোনার মন্দিরে…’ রবীন্দ্র সংগীতে শেষ হয় দুই দিনব্যাপী সর্বজনীন এই দুর্গাপূজা। দরাজ কণ্ঠে গানটি পরিবেশন করেন ডা. দেবব্রত ভাদুরী।
সমাপ্তি দিনে কেউ যেন মা দুর্গাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছিলেন না। সকাল থেকে পূজারিরা দুর্গাদেবীর বেদিতে পূজা-অর্চনা দিয়ে আশিবাদ কামনা করেছেন। অনেকে শেষবারের মতো আপন মনে পূজা করতে ভোলেননি। এদিন সকাল থেকে পরিবেশিত হয় শ্যামাসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, নৃত্য-কৌতুক ও নাটক। চলে দুপুর অবদি। আশিষ ঘোষ হাজরার কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত সবাইকে ক্ষণিকের জন্য অন্য ভুবনে নিয়ে যায়। দুপুরে কাবেরী ও রূপম কান্তি দেবের মুখরোচক ইলিশ ভাজাসহ ভক্তদের নান পদের মাংস, ডাল-সবজি আর সাদা ভাত দিয়ে ভূরিভোজ চলে।
প্রবাস জীবনে নানা ব্যস্ততার মাঝে পূজা পার্বণে অংশ নেওয়া সবার হয়ে ওঠে না। তাই ক্যানসাস রাজ্যের ওকলাহোমা সিটি থেকে ছুটে আসেন এক পূজারি। তার ফুটফুটে মেয়েকে নিয়ে দেবী দুর্গার সামনে ছবি তুলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন। এ মহাআনন্দে যোগ দিয়ে একপর্যায়ে সবাই হলি খেলায় মেতে ওঠেন। এ সময় অনেককে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
উচিটার দুর্গাপূজা সফল করতে দূর থেকে এসে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাঁদের নাম নিতে আয়োজকেরা ভোলেননি। তাঁরা হলেন ডা. প্রণব সেন শর্মা, ডা. দেবব্রত ভাদুরী, আশিস ঘোষ হাজরা, ড. অনিমেষ চক্রবতী, ড. দীপক মল্লিক, দীপক মল্লিক, রুমা, দীপক ঘোষ, পার্থ মজুমদার, সুমিতা, দেবাশীষ ঘোষ, কাবেরী ও প্রকৌশলী রূপণ কান্তি দেব, সুকুমার ব্যানার্জি, শ্যামল আচার্য ও শুভ্রা প্রমুখ। তাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
জানা যায়, ২৫ বছর আগে (১৯৯১ সালে) ডা. দেবব্রত ভাদুরীর বাড়ি থেকে শুরু করে আজকের আলো-ঝলমলে ও জাঁকজমকপূর্ণ এ দুর্গা উৎসব। উচিটার বাঙালি কমিউনিটি এ বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। এ বছর এ উদ্‌যাপনের ২৫ বছর পেরিয়ে ২৬ বছরে পা দিল বলে জানান ডা. প্রণব সেন শর্মা। তিনি আরও বলেন, সেই ২৫ বছর আগে স্বগত সুরেশ করের সহযোগিতায় ক্যানসাসে দুর্গা ঠাকুর আনা হয়। বাংলাদেশের কালিহাতীর পটুয়ার নিপুণ হাতে তৈরি দুর্গাদেবী। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আজ আমরা উচিটায় দুর্গা উৎসব পালন করতে পেরে আনন্দিত। এ বছর এ উদ্‌যাপনের ২৫ বছর পেরিয়ে ২৬ বছরে পা দিল।