নিউ ইয়র্ক

নিউইয়র্কে উৎসব আনন্দে মেতেছে বাংলাদেশিরা

nyগ্রীষ্মে নিউইয়র্ক সম্পূর্ণ এক ভিন্ন নগরী। রোদেলা দিনের ঝকঝকে আলো। নগরকেন্দ্র থেকে সমুদ্র তীরে মানুষের উল্লাসমূখর চষে বেড়ানো। ঘরের আঙিনা থেকে পার্কে, সমুদ্র সৈকতে সর্বত্র উৎ​সবে জেগে থাকা এ নগরী। আঙিনার বারবিকিউ থেকে গলফ খেলার সবুজ মাঠে মানুষের আনন্দ উল্লাস। যন্ত্রের মতো কাজ করা মানুষগুলো গ্রীষ্মের এ সময়ে যেন ভিন্ন রূপ ধরে। নানা দেশ থেকে আসা নানা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ যেন উন্মুখ হয়ে থাকে গ্রীষ্মের এ সময়ের জন্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লম্বা ছুটি। পরিবারগুলো সন্তানদের স্কুল কলেজ নিয়ে গ্রীষ্মকালে কোনো ভাবনা নেই। উৎসব আনন্দের নানা আয়োজনে রঙিন আর কোলাহলের নগরী এখন আমেরিকার নিউইয়র্ক নগরী।
বাংলাদেশি কমিউনিটিও উৎসব আনন্দে মেতে উঠেছে। ঈদুল ফিতরের পর থেকে প্রায় প্রতি শনিবার-রোববারে ডজন খানেক বনভোজন আয়োজন থাকছে। দেশছাড়া লোকজনের পদভারে মুখর হয়ে হচ্ছে নিউইয়র্ক ও আশপাশের পার্কগুলো। এস্টোরিয়া পার্কে বসে প্রবাসীরা দেশের লাউয়াছড়ার নস্টালজিয়ায় কাতর হতে দেখা যাচ্ছে। ছোট বড় সবাই মিলে আনন্দ করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন, ফিরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের স্মৃতিতে। বনভোজনকে ঘিরে বাইরের স্টেট থেকেও নিউইয়র্কের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আসছেন অনেকে। শনিবার-রোববার সরকারি ছুটির দিন হলে অসংখ্য গাড়ি জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন থেকে বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজনকে নিয়ে বনভোজনস্থলে যাচ্ছে। এ ছাড়া চলছে পারিবারিক অনুষ্ঠান। বিয়ে, পানচিনি, জন্মদিন ও গ্র্যাজুয়েশন পার্টিও। বাদ যাচ্ছে না একক বা দ্বৈত সংগীতানুষ্ঠানের। বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজনকে সঙ্গীতসুরে মুগ্ধ করতে ছুটে আসছেন অনেক শিল্পী। ছুটির দিনে বিকেলে বাড়ির সামনে ও পেছনের আঙিনায় চলছে বারবিকিউ পার্টি। আবার কয়েক পরিবার এক হয়ে পার্টির জন্য যাচ্ছেন পার্ক বা সমুদ্র সৈকতের ধারে। সব মিলে বলতে গেলে এ এক অন্যরকম সামার উদ্‌যাপন করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বেশ বড় আকারে কয়েকটি বনভোজন আয়োজন করা হয় বাংলাদেশি সংগঠনের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে ২৪ জুলাই লং আইল্যান্ড সিটির হেকশেয়ার স্টেট পার্কে অনুষ্ঠিত হয় নওগাঁ জেলা সমিতি অব ইউএসএ-এর বনভোজন। এতে সমিতির সদস্য এবং পরিবার মিলে অন্তত আড়াই শ প্রবাসী সবুজ ও গাছগাছালি ঘেরা পার্কে আনন্দে মেতেছেন।

বনভোজন আয়োজক কমিটির একজন রাজীব আহসান চৌধুরী। তিনি বলেন, লংআইল্যান্ডের হেকশেয়ার স্টেট পার্কে বনভোজনকে ঘিরে বসেছিল নওগাঁবাসীর মিলন মেলা। সংগঠনের সদস্য এবং সদস্যদের পরিবার ও তাদের আমন্ত্রিত অতিথিরা গাছগাছালি ঘেরা স্টেট পার্কে কাটিয়েছেন অন্যরকম একটি দিন। নিউইয়র্কের আকাশে প্রখর রোদ থাকলেও পার্কের সবুজ আর নির্মলতার কারণে বনভোজনে আগতদের একটু বেগ পেতে হয়নি বরং পার্কের হিমেল মুক্ত হাওয়ায় দুলেছেন তারা। বনভোজনে বিনোদন, খেলাধুলা ছিল জম্পেশ আড্ডাও। সেই খেলাধুলায় বাদ যায়নি শিশু থেকে বয়স্করাও।

মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুর অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক বনভোজন ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় জর্জ আইল্যান্ড পার্কে। বনভোজনের উদ্বোধন করেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা আকতার হোসেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন বনভোজন কমিটির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান দেওয়ান, মইনুল হাসান কাজল, মোশারফ হোসেন, সংগঠনের সভাপতি ইকবাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম ঢালি ও কার্যকরী কমিটির নেতারা। বনভোজনের উদ্বোধনের পরপরই শুরু হয় ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলা। খেলাধুলা পরিচালনা করেন মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান এবং বিচারক মণ্ডলীতে ছিলেন উপদেষ্টা হাফিজুর রহমান বাবুল, মজিবুর রহমান, হাবিবুর রহমান দেওয়ান। গরমের মধ্যে বনভোজনে যোগ দেওয়া লোকজনের মধ্যে তরমুজ বিতরণ করেন জহিরুল কাইয়ুম প্যারিস ও মো. আজিম। খেলাধুলার পরপরই শুরু হয় মধ্যাহ্ন ভোজ।

প্রবাসের বৃহত্তম সামাজিক ও উত্তরাঞ্চলের সংগঠন নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ইনকের জমজমাট বার্ষিক বনভোজন ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয় ১০ জুলাই লং আইল্যান্ডের বেলমন্ট লেক স্টেট পার্কে। সংগঠনের সভাপতি ডা. আব্দুল লতিফ বলেন, ব্রুকলিন, ব্রঙ্কস, কুইন্স থেকে তিনটি বাসসহ ৭৫টি প্রাইভেট কার ও মিনি ভ্যান যোগে প্রায় ৩৫০ জন নর্থ বেঙ্গল বাসীসহ বিভিন্ন কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ বনভোজনস্থলে উপস্থিত হন। রং বেরঙের পোশাক পরা ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করেন। ঈদের এ আনন্দকে আরও আনন্দময় করে তুলতে সবার প্রচেষ্টা ছিল অতুলনীয়।

বাংলাদেশ সময় ২৭ জুলাই বুধবার ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তারই আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন। বুধবার দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ জ্যাকসন হাইটেসর মেজবান রেস্তোরাঁয় কেক কেটে জয়ের জন্মদিন পালন করেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের সহসভাপতি আবুল কাসেম ও লুৎফর করিম। তারা একে অন্যকে কেক খাইয়ে দিয়ে আনন্দ করেন।

রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে কবি গুরুর ভাঙা গান নিয়ে ‘তোমার সংগীত সুমধুর’ অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল ২৪ জুলাই। এস্টোরিয়ার ৩০-১৫,২৯ স্ট্রিটের পিএস ২৩৪ এর এ আয়োজনে কয়েকশ দর্শক রবীন্দ্র সংগীত শোনেন। প্রকৃতি নিউইয়র্ক নামের একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ধ্রুপদ, খেয়াল, তারানা, বিলাতি, টপ্পা ও লোকসংগীতের সংমিশ্রণে রবীন্দ্রনাথের ভাঙা গান ছিল আয়োজনে।

একই দিন জয়তী চক্রবর্তী ও শ্রীকান্ত আচার্যের ‘কাল আজ ও আগামী কালের’ গানের দ্বৈত সংগীতানুষ্ঠান ছিল ফ্লাশিংয়ের দ্য হিন্দু ট্যাম্পেল কমিউনিটি সেন্টারে।

২৫ জুলাই নিউইয়র্কে একটি বিলাসী বা আলোচিত বিয়ের অনুষ্ঠান হয়ে গেছে। ইয়াঙ্কারস এলাকায় এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান এবং কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট আসিফ চৌধুরীর পরিবারের দুই সদস্যের বিবাহ অনুষ্ঠান ছিল। লাল নীল সবুজ বাতির মিশেলে বিয়ের অনুষ্ঠানের সিলেটের অনেকেই অংশ নিয়ে আনন্দ করেছেন।

২২ জুলাই ওয়েস্ট গার্ডেন সিটির মিন্ট রেস্টুরেন্টে ছিল ফ্লাশিংয়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাসান রিজভী চৌধুরীর বড় পুত্র রাজ কমলের গ্র্যাজুয়েশন পার্টি। এতে পরিবারের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন স্টেট থেকে রাজ কমলের আমেরিকার বন্ধুবান্ধবসহ অনেকেই ছুটে এসেছিলেন। মাঝ রাত পর্যন্ত গ্র্যাজুয়েশন পার্টিতে আনন্দ করেছেন অতিথিরা। শুভ কামান জানিয়েছেন রাজকমলের জন্য।

নিউইয়র্কে আগামী সড়কগুলোতেও বেশ ক ‘টি বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। এর মধ্যে বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী কাদেরী কিবরিয়ার একক সংগীতানুষ্ঠান ২৬ আগস্ট এস্টোরিয়ার ক্লাব সনমে। আর ৭ আগস্ট কক্সবাজার অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকার জাঁকজমকপূর্ণ বনভোজন হবে নিউইয়র্কের অদূরে সবুজ গাছগাছালি ঘেরা কোনো এক পার্কে এমনটাই জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন।

এসব অনুষ্ঠান ছাড়াও চলছে বাসা বাড়িতে বার বি কিউ পার্টি। নিউজার্সির শিক্ষার্থী ইশরা চৌধুরী বলেন, আমরা আগস্টের শেষ দিকে একটি বড় বারবি কিউ পার্টির প্রস্তুতি নিচ্ছি। এতে অন্য স্টেটের আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হবে, আমরা সবাই মিলে মজা করব।