আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্ক মতামত

কেরির সফরে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের ইঙ্গিত

kerryভারত সফরের প্রাক্কালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি নয় ঘণ্টার ঝটিকা সফর করে গেলেন বাংলাদেশে। জন কেরির এই সফর বিভিন্ন কারণে আলোচিত, পর্যালোচিত, পুঙ্খালোচিত হয়েছে এদেশের সকল মহলে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব রয়েছে সেই পাকিস্তান আমল থেকেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আমেরিকা যখন মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বৃদ্ধি শুরু করে তখন থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা শুরু হয়। দেশ ভাগের পর পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার জয়রথ এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলতে থাকে।

ভারতের শিক্ষিত সমাজের সমাজতন্ত্রের প্রতি প্রগাঢ় আগ্রহের ফলে তাদের নেতারা সে সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহযোগিতা জোরাল করে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের উপর ভর করা ছাড়া আমেরিকার আর অন্য কোন উপায় থাকে না। অন্যদিকে মাও সে তুং আমলে সমাজতান্ত্রিক চিনের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের এবং ভারতের দূরত্ব বাড়তে থাকে।

একাত্তর সালে মার্কিন টেবিল টেনিস দল জাপানে ৩১তম বিশ্ব টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে জাপানে আসে। ৬ এপ্রিল তারা চীন থেকে খেলার আমন্ত্রণ পায়। সে আমন্ত্রণ রক্ষার জন্য মার্কিন দল চীনে পৌঁছায় ১০ এপ্রিল। শুরু হয় বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণ। ‘৪৯ সালের পর এটাই কোন মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রথম চীন সফর। এই সফরের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় চীন-আমেরিকা কূটনৈতিক সম্পর্ক। ইতিহাসে এ ঘটনা পিং পং ডিপ্লোম্যাসি নামে পরিচিত। পিং পং ডিপ্লোম্যাসির ভেতরে পাকিস্তানের ভূমিকা ছিল যা পরবর্তী সময়ে প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তথা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে। পাকিস্তান ও আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের বিরোধিতা করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করে।

সত্তরের দশকের সে রাজনীতি এখন আর নেই। সোভিয়েত ইউনিয়ন এখন ইতিহাসের বিষয়। বর্তমানে চীন আমেরিকা নিরাপত্তা ইস্যুতে মুখোমুখি; সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি রাশিয়া এখন চীনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু। চীনের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈরী সম্পর্কের ভারত আমেরিকার লাইনে থেকেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে রাশিয়ার সঙ্গে। পাকিস্তান ভারতের বিরোধিতা করে একই সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে আমেরিকা এবং চীনের সঙ্গে। পাকিস্তান-আমেরিকা বন্ধুত্ব এখন আর সত্তরের দশকের মত নেই। আফগানিস্তান এবং জঙ্গিবাদ ইস্যুতে তাদের এখন টকঝালের দিন।

এরকম একটি আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ভারত সফরে এসেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ওবামা সরকারের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসেছেন জন কেরি। ভারতের বন্ধু বাংলাদেশের সঙ্গে ২০১০ সাল থেকে চলে আসা টানাপোড়নের ইতি টেনে জন কেরি দিল্লি গিয়েছেন বৃহত্তর রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার আশায়। প্রশান্ত মহাসাগরে চীন এখন একক শক্তি। ভারত মহাসাগরের উপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টায় এগিয়ে চলছে দেশটি। ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী ঐক্যই চীনকে প্রশান্ত মহাসাগরে সীমাবদ্ধ করতে পারে।

জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরে চীনকে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব। চীন আর ভারতের মাঝখানে রয়েছে নেপাল, বাংলাদেশ, মায়ানমার। এই তিনটি দেশই ভারসাম্য নির্ধারণ করছে আঞ্চলিক দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যে। এমতাবস্থায় বঙ্গোপসাগর তীরের বাংলাদেশের শক্তিশালী হাসিনা সরকারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নতি না করে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে ভারত মহাসাগরে চীনের অগ্রযাত্রা রোধ করা কঠিন। ভারত – বাংলাদেশ সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে ‘০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর। সে সময় ভারতের কেন্দ্রে ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস সরকার এবং বাংলাদেশের সরকারের দায়িত্বে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ থাকায় বাংলাদেশে অভ্যুদয়ে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখা দেশটির সঙ্গে বন্ধুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক বাস্তবতায় ভারতে সরকার পরিবর্তন হলেও সে সম্পর্ক অটুট থাকে।

পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির অংকে এবং বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার খেলায় আমেরিকা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিলে চীনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের বন্ধুত্ব ঘনিষ্ট হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের নেতৃবৃন্দের রয়েছে আস্থার সম্পর্ক। ‘১৩ সালে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের তল্পি বাহকেরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর আড়ালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করে আওয়ামী লীগ সরকারক হটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তখন ভারতের সঙ্গে চীন এবং রাশিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে।

একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের জন্য ট্রাইবুন্যাল গঠন হলে পাকিস্তানের বন্ধু আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে। এই টানাপড়েন আরও বাড়ে ড. মুহম্মদ ইউনূস, পদ্মা সেতু এবং ৫ জানুয়ারী নির্বাচন ইস্যুতে। ‘১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দেয়া শুরু হলে জামায়াত ও বিএনপি যৌথভাবে প্রকাশ্যে সে বিচার বানচালের চেষ্টা চালায়। জামায়াত সরাসরি এই বিচার বাতিল করার দাবী জানায়, গৃহযুদ্ধ ঘোষণা করে। বিএনপি সরাসরি বিচার বানচাল করার কথা না বললেও ইনিয়ে বিনিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীকে সামনে এনে তার আড়ালে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার সমস্ত চেষ্টা চালিয়ে যায়। এ কাজে তারা সহায়তা পায় সৌদি আরব, পাকিস্তান, তুর্কী, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকার কাছ থেকে। মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক স্বার্থে সৌদি আরব, তুর্কী এবং পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকা এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই।

পশ্চিমাদের সমর্থনে এবং সহযোগিতায়ঃ একদিকে স্থানীয় সুশীল সমাজ, পশ্চিম ঘেঁষা বড় বড় মিডিয়া এবং জামায়াত, বিএনপি; অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মিডিয়া, তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসঙ্ঘ একযোগে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বিতর্কিত করে তোলার চেষ্টা করে। সকল রকম কূটনৈতিক শিষ্টাচার বিসর্জন দিয়ে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত প্রকাশ্যে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখতে শুরু করে; মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ঘন ঘন বাংলাদেশ ইস্যুতে বাণী দিতে থাকে। ফলে ব্যাপকভাবে অবনতি হয় বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক। রাশিয়া, চীন এবং ভারত এসময়ে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তিকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে শক্তি যোগায়।

শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক কৌশলঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের মধ্যে দিয়ে এদেশে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পুনরুত্থান রোধ করে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পন্ন করে, সংবিধানকে সমুন্নত রেখে সরকার বদলের প্রক্রিয়া শেষ করে নতুন সরকার গঠন করে।

জামায়াত ও বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্বাচন বানচাল করতে ব্যর্থ হলে আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রদূত পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন দেয়ার দাবী করে বসেন সংবাদ মাধ্যমে। বাংলাদেশ আমেরিকার অন্যায় দাবীর কাছে মাথানত করে নি। বরং সমান গতিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে জনগণের ৪৫ বছরের পুরনো দাবীর বাস্তবায়ন করতে থাকে। দালাল আইন বাতিল করে ‘৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে, দেশে তাদের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার না করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছিল হাসিনা সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব তা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে একই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ বেশী।

বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশ এবং তার নেতার প্রশংসা করছে। বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে পরিদর্শন বইতে জন কেরি লিখেছেন, “বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে, তাঁরই কন্যার নেতৃত্বে”। শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা এবং সঠিক নেতৃত্বের জোর দেখে বাংলাদেশ বিষয়ে পররাষ্ট্রনীতি বদলের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন জন কেরি। জন কেরি প্রথম কোন আমেরিকান নেতা যিনি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, অবনতমস্তক শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে। পরিদর্শন বইতে লিখেছেন, “সহিংস ও কাপুরুষোচিতভাবে বাংলাদেশের জনগণের মাঝ থেকে এমন প্রতিভাবান ও সাহসী নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়া কী যে মর্মান্তিক ঘটনা”।

কোন মার্কিন নেতা এই প্রথম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এমন মর্মস্পর্শী মন্তব্য করেছেন। এর আগে ২০১২ সালে হিলারি ক্লিনটনের সফরের সময় তাঁর বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা বাতিল করেন। আমেরিকার একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও জন কেরি কেনেডি সেন্টারে উপস্থিত সুধীবৃন্দের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বন্ধু এডওয়ার্ড কেনেডি’র (যিনি টেড কেনেডি নামেও পরিচিত) ভূমিকার উল্লেখ করে বলেন, শুধু কেনেডিই নয়, সদ্য ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা তরুণ আমিও সকল ম্যাসাচুসেটসবাসীর সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিলাম বলে গৌরব বোধ করি। টেড কেনেডির ভূমিকার উল্লেখ এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন শুধু বর্তমান সময়ের নিরিখেই নয়, আমেরিকার একাত্তরের ভূমিকা থেকে সরে আসার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত; ভুল স্বীকারের নামান্তর। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে উগ্র ধর্ম ব্যবসায়ীদের রসদ এবং অস্ত্র সরবরাহ করে আমেরিকা জঙ্গিবাদের যে চাষাবাদ শুরু করেছিল তা বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে তাদের উপর।

জঙ্গিবাদী রাজনীতি থেকে বেড়িয়ে আসা ছাড়া এখন আর তাদের অন্য কোন উপায় নেই। তারা এখন ধর্মান্ধ জামায়াত এবং তাদের লেজুরধারী, অক্ষম বিএনপি’র প্রতি সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশকে হারাতে চাইতে পারে না। আঞ্চলিক রাজনীতির স্ট্রাটেজিক কারণে বাংলাদেশ এখন তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনের রাজনীতিতে এই সত্য আরও ব্যাপকভাবে প্রকাশ পাবে। আমেরিকার কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশকে সে গুরুত্ব কাজে লাগাতে হবে। তাদের কাছ থেকে এবং তাদের সহায়তা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনা, বাংলাদেশী পণ্যের জন্য অবাধ ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা, মার্কিন বিনিয়োগ, জঙ্গিবাদ দমনে তথ্য এবং কারিগরি সহায়তা, ইত্যাদি আদায় করে নিতে হবে।

পরিবেশ পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হবে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য বিশাল দেশ আমেরিকা ভূমিকা রাখতে পারে। চীনের রাষ্ট্রপতির ভ্রমণের দিনক্ষণ প্রকাশ হওয়ার পরে হঠাৎ করে জন কেরির বাংলাদেশ সফর এই ইঙ্গিত দেয় যে আমেরিকা চাইছে না বাংলাদেশ চীনের দিকে বেশী ঝুঁকে পড়ুক। ভারতের দৃষ্টি ভঙ্গিও যে একই তা সকলেরই জানা। ভারত বা আমেরিকা কি চায় বা না চায় তা বিবেচনা করা বাংলাদেশের কাজ নয়। ভারত, চীন, জাপান, আমেরিকা কিংবা রাশিয়া – কেউই আমাদের উর্ধ্বে তুলে ধরবে না। তারা তা চাইলেও পারবে না। কারো প্রতি আমাদের বেশি মাত্রায় অনুরক্ত হওয়ারও প্রয়োজন নেই। আমেরিকা এবং চীন পাকিস্তানকে শত শত বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। তা দিয়ে পাকিস্তানের উন্নতি হয়নি, ধ্বংস হয়েছে। সঠিক পথে না চললে কেউ কাউকে এগিয়ে দিতে পারে না। বড় হতে হলে, অন্যের কাছ থেকে সম্ভ্রম আদায় করে নিতে হলে নিজেদের পরিশ্রমে, মেধায়, মানবিকতায় তা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে সকলের সঙ্গে সমান বন্ধুত্ব বজায় রেখে যার কাছ থেকে যা নেয়ার এবং যাকে যা দেয়ার তা সঠিক ভাবে দিয়ে দিলে প্রগতির পথে এগিয়ে চলতে থাকবে বাংলাদেশ।